You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.11 | তেকালা ব্যাংগাড়ি মাঠ যুদ্ধ (দৌলতপুর, কুষ্টিয়া) - সংগ্রামের নোটবুক

তেকালা ব্যাংগাড়ি মাঠ যুদ্ধ (দৌলতপুর, কুষ্টিয়া)

তেকালা ব্যাংগাড়ি মাঠ যুদ্ধ (দৌলতপুর, কুষ্টিয়া) সংঘটিত হয় ১১-১৩ই নভেম্বর। অত্র এলাকার সবচেয়ে বড় এ-যুদ্ধে প্রায় ৫ শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৩ জন সদস্যকে হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়।
উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের গরুড়া, তেকালা ও ধর্মদহ এ ৩ গ্রামের মাঝখানে অবস্থিত তেকালা ব্যাংগাড়ি মাঠ। মুক্তিযুদ্ধকালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমানা ঘেঁষে মাথাভাঙ্গা নদী বেষ্টিত গ্রামগুলো সব সময় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। প্রাগপুর ইপিআর ক্যাম্প, হোসেনাবাদ ক্যাম্প ও বামুন্দি ক্যাম্পসহ কাছাকাছি বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ-সকল গ্রামে আক্রমণ করবে এমন সংবাদের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করার প্রস্ততি নেন। তাঁরা তেকালা ব্যাংগাড়ি মাঠে এম্বুশ গ্রহণ করেন। ১১ই নভেম্বর রাতে পাকবাহিনীর প্রায় দেড় শতাধিক সদস্যের একটি দল গ্রামে প্রবেশ করলে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের এম্বুশে পড়ে এবং শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। পরদিন হানাদার বাহিনীর কয়েকশ সদস্য সেখানে পুনরায় আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের এম্বুশে পড়ে তাদের শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। এর পরের দিন হানাদারদের কয়েকশ পুনরায় ঘটনা স্থলে যায়। এবারো তারা সেখানে পরাস্ত হয় এবং ২ শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে পাকসেনাদের ১০টি ৪ এস মর্টার সেট করা ছিল এবং সেখান থেকে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে বোমা ছোড়ে বোমাগুলোর প্রায় সবই পাকসেনাদের ওপর পড়ে এবং তাতে তারা মৃত্যবরণ করে। হানাদাররা তাদের নিহত সৈন্যদের লাশ ট্রাকে করে নিয়ে যায়। অত্র এলাকার বৃহত্তম এ-যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ৫ শতাধিক সৈন্য নিহত হলে তারা সেখান থেকে সরে পড়ে। যুদ্ধে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা মো. শহীদুল ইসলাম, মো. মোসলেম উদ্দিন ও মো. সোহরাব হোসেন এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৩ জন সদস্যকে হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কমান্ডার লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবী, সহকারী কমান্ডার সুবেদার আব্দুল লতিফ, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী প্রমুখের নেতৃত্বে এ-যুদ্ধে তেকালা, গোয়ালগ্রাম, প্রাগপুর, শেহালা, বিলগাথুয়া, মহিষকুণ্ডি, নতুন কাঘাটিনওদাপাড়া, ধর্মদহ, বাজুমারাসহ পাবনা, রাজবাড়ী, মেহেরপুর, ফরিদপুর ও রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধারা এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। [মো. ছাদিকুজ্জামান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড