You dont have javascript enabled! Please enable it! তালাইমারী বধ্যভূমি ও গণকবর (রাজশাহী সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

তালাইমারী বধ্যভূমি ও গণকবর (রাজশাহী সদর)

তালাইমারী বধ্যভূমি ও গণকবর (রাজশাহী সদর) রাজশাহী সদরে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়।
১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজশাহী শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর শহরে ব্যাপক গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ চালায়। ঢাকা থেকে রাজশাহী শহরের প্রবেশমুখে তালাইমারী মহল্লা। এ কারণে শহরে প্রবেশের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা তালাইমারীতে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। তালাইমারীর পার্শ্ববর্তী হাদীরমোড়, রাণীনগর, সাধুরমোড়, মুনাফের মোড় প্রভৃতি মহল্লাতেও গণহত্যা, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শহরে প্রবেশের প্রথম দু-এক দিনের মধ্যেই পাকিস্তানি সৈন্যরা তালাইমারী ও তৎসংলগ্ন পাড়াগুলোতে শতাধিক মানুষকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ২৮ জনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। অনেকেই ভাড়া বাড়িতে বাস করতেন। তাই তাদের নাম-পরিচয় জানা যায় নি। জীবিতরা পরবর্তীকালে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। স্থানীয় মহল্লাবাসীরাও কেউ-কেউ স্থানান্তরিত হয়। শহীদদের লাশ যত্রতত্র পড়ে ছিল। দাফন করার লোক ছিল না। কেউ স্বজনদের লাশ চুপিচুপি দাফন করেছিল। অনেকের লাশ সমাহিত করা হয়নি। সেগুলো কুকুর, শিয়াল আর শকুনের খাবারে পরিণত হয়।
তালাইমারী বধ্যভূমিতে নিহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন- মো. আলাউদ্দিন (পিতা আব্দুল মালেক), মো. আনিসুর রহমান, মিসেস ঘরেশ শেখ, মো. নাঈমুদ্দিন, মো. মাসুম, মো. নসিমুদ্দিন মিস্ত্রী, মো. মেঘু (পিতা শুকুর শেখ), আজাহার আলি (পিতা এমাজউদ্দিন; ব্যবসায়ী), একরাম আলি (পিতা এমাজউদ্দিন), রঘুনাথ সাহা (পিতা প্রসন্ননাথ সাহা), মো. জামাল উদ্দিন (পিতা মো. বাসের উদ্দিন), মো. নাজিম উদ্দিন (পিতা মো. জামাল উদ্দিন), মো. আমলগীর (পিতা মো. উমর আলি), কিরণবালা সরকার (পিতা মধুসূদন সরকার), কিয়ামত আলি (পিতা মো. খেতু মণ্ডল), মো. লেবু (পিতা মো. নাসির উদ্দিন), মো. কোরবান আলি (পিতা মো. নেশের শেখ), মো. বজলার রহমান (পিতা মো. ওসমান আলি), জেকের মোল্লা, বাবর আলি, কজিম উদ্দিন, মিসেস বাহার মণ্ডল (স্বামী মো. বাহার মণ্ডল), তার এক পুত্র ও এক কন্যা, তসলেম উদ্দিন, মো. আজিজুল হক, আবু বাক্কার ও মো. সইজুদ্দিন (রিক্সাচালক)। শহীদদের স্মরণে তালাইমারী পদ্মার পাড়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ২৮ জন শহীদের নাম উৎকীর্ণ করা আছে। [মো. মাহবুবর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড