বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের কথাসাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী (১৮৯৮- ১৯৭১) ভারতের কথাসাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৮৯৮ সালের ২৩শে জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেন। লাভপুরের যাদবলাল উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করে (১৯১৬) তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও আশুতোষ কলেজে পড়াশোনা করেন। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং কারাবরণ করেন। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর (১৯২১) লেখক হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। তিনি বিধানসভা (১৯৫২-৫৮) ও রাজ্যসভার (১৯৬০-৬৬) সদস্য ছিলেন।
উপন্যাস (৬৫), গল্পগ্রন্থ (৫৩), নাটক (১২), প্রবন্ধ সংকলন (৪), আত্মজীবনী (৪), ভ্রমণ কাহিনি (২) ইত্যাদি রচনার মাধ্যমে তারাশংকর স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস চৈতালী ঘূর্ণি (১৯৩২)। তাঁর অসংখ্য রচনা চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য পুস্তকগুলো হলো- সপ্তপদী, ধাত্রীদেবতা, কালান্তর, গণদেবতা, চাঁপাডাঙার বৌ, ডাকহরকরা, নীলকণ্ঠ, গুরুদক্ষিণা ইত্যাদি। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতি (১৯৫৬) ও সভাপতি (১৯৭০) ছিলেন। সাহিত্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী (১৯৬২) ও পদ্মভূষণ (১৯৬৯) খেতাবে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫৫), সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৭) ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (১৯৬৬) সহ অনেক পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তারাশংকর বাংলাদেশ লেখক সহায়ক সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে আগত লেখকদেরকে সহযোগিতা করার জন্য সভা- সমিতির আয়োজন করেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে ও বিশ্বে জনমত সৃষ্টিতে সহায়তা করেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে তিনি অর্থ সংগ্রহ করে তা শরণার্থীদের জন্য প্রেরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৫ই ডিসেম্বর ২০১২ তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড