You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের অধ্যাপক তারিক রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের অধ্যাপক তারিক রহমান

তারিক রহমান (জন্ম ১৯৪৯) পাকিস্তানের অধ্যাপক। তিনি ১৯৪৯ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরেলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫১ সালে সপরিবারে তাঁরা পাকিস্তান গমন করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে অ্যাবোটাবাদের বার্ন হল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৬৯ সালে দর্শন ও ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য ও ইতিহাস বিষয়ে ১৯৮২ সালে স্নাতকোত্তর ও ১৯৮৫ সালে ইংরেজিতে পিএইচডি ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৯৮৯ সালে ভাষাবিদ্যায় এম.লিট ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করেন। তিনি জম্মু ও আজাদ কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ছিলেন এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাবিদ্যা বিভাগ চালু করেন। তিনি কায়েদ আযম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত National Institute of Pakistan Studies (NIPS)-এর ভাষাবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, ভাষাবিদ্যা বিভাগ ও দক্ষিণ এশীয় শিক্ষা বিষয়ক অধ্যাপক ও এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৪ সালে জাতীয় অধ্যাপক এবং ২০১০ সালে কায়েদ আযম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তাঁর সাহিত্য ও গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে Pakistani English (১৯৯০), A History of Pakistani Literature in English (১৯৯১), Language and Politics in Pakistan (১৯৯৬), Language, Education and Culture (১৯৯৯) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক Pride of Performance খেতাবে ভূষিত হন (২০০৪)।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তরুণ কর্মকর্তা তারিক রহমান বাঙালিদের ওপর তাঁর দেশের সেনাবাহিনীর নৃশংসতায় খুবই ক্ষুব্ধ হন। পরবর্তীকালে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ত্যাগ করতে সক্ষম হন। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ ছিলেন, যার ফলে তাঁকে সামরিক সরকারের হাতে হেনস্তা হতে হয়। বাঙালিদের ভাষা-আন্দোলন- ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়ে তিনি ব্যাপক গবেষণা করেন। তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মেও বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নৃশংসতা বিধৃত করেছেন। পাকিস্তানি হয়েও তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমাপ্রার্থনার তিনি একজন দৃঢ় সমর্থক। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১লা অক্টোবর ২০১৩ ড. তারিক রহমান-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড