You dont have javascript enabled! Please enable it!

তানোর থানা অপারেশন (তানোর, রাজশাহী)

তানোর থানা অপারেশন (তানোর, রাজশাহী) পরিচালিত হয় ১৯শে নভেম্বর। থানার পুলিশ স্টেশন ও দরগাডাঙ্গা ক্যাম্প ছিল শান্তি কমিটির সদস্য, রাজাকার এবং পাকসেনাদের নির্যাতনকেন্দ্র। তাদের এ নির্যাতন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে গোদাগাড়ীর সৈয়দপুর গ্রামস্থ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের কমান্ডার শফিকুর রহমান রাজা (রাজশাহী)-র নেতৃত্বে মনসুর (সৈয়দপুর), ডাক্তার শেখ মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, গিয়াস, এমদাদ” ডাক্তার (পিতা এমরান আলী খান, গোপালপুর), ওবায়দুল্লাহ পিন্টু (পিতা ডা. ওয়াজেদ আলী, গোপালপুর), মো. এরশাদ আলী সরকার প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা থানা দখলের সিদ্ধান্ত নেন। তার আগে তাঁরা রাজাকার কমান্ডার আলহাজ শামছুদ্দিন (পিতা মুন্তাজ আলী, শিদাইড়)-কে ধরার জন্য তার বাড়ি ঘেরাও করেন। তাকে না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এম্বুশ গ্রুপ, কাটআউট গ্রুপ, সার্সিং গ্রুপ এবং একশন গ্রুপে ভাগ হয়ে থানা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হন। ১৯শে নভেম্বর রাত ১টার দিকে তাঁরা বিভিন্ন দিক থেকে একযোগে থানা আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার শেখ মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী ছিলেন এম্বুশ গ্রুপে। থানার দক্ষিণ দিকে আমশো মেডিকেলের উত্তর পাশে এন্টিট্যাংক মাইন পুঁতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হানাদাররাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। ফলে উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বেশ কয়েকজন রাজাকার নিহত হয় এবং বাকিরা থানা ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ফেলে যাওয়া বেশকিছু অস্ত্র হস্তগত করেন।
এ অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধা টুআইসি কমান্ডার মঞ্জুর (সৈয়দপুর, গোদাগাড়ী), ঈশ্বর মুরমু (পিতা চাদরা মুরমু নাটোর, লালপুর; সাঁওতাল সম্প্রদায়ভুক্ত) ও নূর ইসলাম (হরিয়ান, কাঁটাখালী) শহীদ এবং মো. আব্দুল গনি সরদার (পিতা বছির উদ্দীন, দুর্গাপুর) আহত হন। গুলি লেগে তাঁর পিঠের বামদিকের মাংস উড়ে যায়। তাঁকেসহ নিহতদের সৈয়দপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুটি লাশ দাফনের প্রস্তুতি গ্রহণের সময় খবর আসে যে, চান্দুড়িয়া ও কাঁকনহাটে পাকসেনারা এসেছে এবং তারা সৈয়দপুর গ্রামে আক্রমণ চালানোর জন্য অগ্রসর হচ্ছে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা আত্মরক্ষার্থে একটু দূরে গিয়ে অবস্থান নেন। পাকসেনারা এসে লাশদুটি দেখে চলে যায়। যাওয়ার সময় গ্রামের অনেক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। তারা চলে যাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা এসে লাশদুটি দাফন করেন এবং আহত মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল গনি সরদারকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
লাশ দাফনের পর মুক্তিযোদ্ধারা তাঁতিহাটির কাপড় ব্যবসায়ী ফজর আলীর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ঐ এলাকার কয়েকজন রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধারা বন্দি করে তাঁতিহাটের পশ্চিম পার্শ্বস্থ খাড়ির পানিতে ফেলে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করেন। এরপর তাঁরা তাঁতিহাট থেকে শাহাপুর দমদমা স্কুলে গিয়ে আশ্রয় নেন। [আখতারুজ্জাহান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!