You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.21 | তামাই পশ্চিমপাড়া যুদ্ধ (বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

তামাই পশ্চিমপাড়া যুদ্ধ (বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ)

তামাই পশ্চিমপাড়া যুদ্ধ (বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২১শে আগস্ট। সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার তামাই গ্রামে পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত এ-যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪ জন শহীদ ও ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। যুদ্ধের পর পাকসেনারা গ্রামে ব্যাপক লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। সিরাজগঞ্জ শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বেলকুচি থানা থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে তামাই গ্রামের অবস্থান। বর্তমানে তামাই ভাঙাবাড়ি ইউনিয়নের অন্তর্গত। হুড়াসাগর নদীর পাড়ে গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় ঈদগাহ মাঠের পাশে এ-যুদ্ধ হয়।
২১শে আগস্টের যুদ্ধের আগে পাকসেনারা হুড়াসাগর নদীতে যাত্রীবাহী নৌকায় গুলি চালায়। তাদের গুলিতে তামাই বাজারের ফাতেমা বেগম নামের এক গর্ভবতী মহিলাসহ ৯ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে তামাই গ্রামের বাসিন্দা তামাক বিক্রেতা সিদ্দিক ছিলেন। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।
২০শে আগস্ট ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা তামাই গ্রামে আসেন। গ্রামের বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফজলুল হক ভাষানী ও কয়েকজন যুবকের সহযোগিতায় তাঁরা ফজলুল হকের বাড়িতে অবস্থা নেন। এ খবর কাজিপুরার দালাল নেজাব সরকার সিরাজগঞ্জ ক্যাম্পের পাকসেনাদের জানায়। পরদিন ২১শে আগস্ট সকাল ১০টার দিকে ৪০-৫০ জন পাকসেনা গানবোটে করে তামাই পশ্চিম পাড়ায় আসে। গানবোটটি ঈদগাহ মাঠের পাশে ভেড়ানো হয়। পাকসেনাদের তামাই আসার খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৯টার দিকে ঈদগাহ মাঠের পাশে একটি পাটক্ষেতের আড়ালে এম্বুশ করেন। পাকসেনারা গানবোট থেকে নামার সঙ্গে-সঙ্গে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। পাকসেনারাও পাল্টা গুলি চালায়। মাত্র ৫ শত মিটার দূরত্বে দুপক্ষের মধ্যে প্রায় ১ ঘণ্টা সম্মুখ যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪ জন শহীদ ও বেলকুচির সামছুল হকসহ ৪ মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। তামাই পশ্চিমপাড়া গ্রামের খন্দকার ফজলুল হক ভাষানী, মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সংগঠক গোলাম সরোয়ার, নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ, হাফেজ দবির উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, জুলফিকার রফিক রঞ্জু যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ছিলেন। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা ১৭টি থ্রি-নট-থ্রি ও মার্ক-৪ রাইফেল ব্যবহার করেন। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ-কেউ দেশীয় অস্ত্র তীর- ধনুক, বাঁশের টেটা, বল্লম ও লোহার ফলা ব্যবহার করেন। অপরদিকে পাকসেনারা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। যুদ্ধ শেষে পাকবাহিনী সিরাজগঞ্জ চলে গেলে শহীদ ২ মুক্তিযোদ্ধাকে তামাই পশ্চিমপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। তামাই পশ্চিমপাড়া যুদ্ধে শহীদরা হলেন- গাজিয়ার রহমান গাজী (রুহুলি, ইউনিয়ন গোবিন্দাসী, উপজেলা ভুঞাপুর, টাঙ্গাইল) ও হাসানুজ্জামান লেবু (রুহুলি ইউনিয়ন গোবিন্দাসী, উপজেলা ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল)। আবু বকর সিদ্দিক (কাজিপুরা, সিরাজগঞ্জ) ও সুখিতন্নেছা (কাজিপুরা) নামে ২ জন গ্রামীবাসী শহীদ হন। যুদ্ধের পর তামাই গ্রামের মানুষ ভয়ে-আতঙ্কে পালিয়ে যায়। ২২শে আগস্ট পাকসেনারা আবার তামাই গ্রামে হানা দেয়। তারা গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে। সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস শহীদ মুক্তিযোদ্ধা গাজী ও লেবুর কবরস্থানে একটি পাকা সৌধ নির্মাণ করেছেন। [মাহফুজা হিলালী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড