You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম তারা উদ্দিন - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম তারা উদ্দিন

তারা উদ্দিন, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৫৩ ) সিপাহি ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৩ সালে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার নারায়ণডহর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খোদা নেওয়াজ খান এবং মাতার নাম আতরজান বিবি। এ দম্পতির ৩ সন্তানের মধ্যে তারা উদ্দিন দ্বিতীয়।
তারা উদ্দিন ১৯৬৯ সলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে ৩য় বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিয়োজিত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচার হত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ার পর তারা সৈয়দপুর সেনানিবাসে বাঙালি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। বাঙালি সৈনিকরা সেনানিবাসের কোঁত ভেঙ্গে অস্ত্রহাতে রুখে দাঁড়াবার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁদের পক্ষে বেশিক্ষণ টিকে থাকা সম্ভব হয়নি। এক সময় কিছু অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা উদ্দিন ও সহযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন আনোয়ারের নেতৃত্বে সেনানিবাসের বাইরে চলে আসতে সক্ষম হন। এ-সময় জনতা তাঁদের সাহায্যার্থে রাস্তায় নেমে আসে। তারা সেনাদের যুদ্ধের অনুপ্রেরণা, খাদ্য সরবরাহ ও অন্যান্য সহযোগিতা দিতে থাকে। অস্ত্র ও গোলাবারুদের ঘাটতির কারণে বাঙালি সৈন্যরা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আবস্থান নেন। এরপর মেজর শাফায়াত জামিল, বীর বিক্রম- ৩য় বেঙ্গলের সিও নিযুক্ত হলে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের নেতৃত্বে তারা উদ্দিন ‘জেড’ ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হন। ক্যাপ্টেন আনোয়ার তাঁর বাহিনী নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে অনেকগুলো আক্রমণ পরিচালনা করেন। তাঁর সকল অভিযানে সিপাহি তারা উদ্দিন বীরোচিত ভূমিকা পালন করেন। ক্যাপ্টেন আনোয়ারের নেতৃত্বে ১লা ডিসেম্বর তাঁরা কোম্পানিগঞ্জ মুক্ত করে সিলেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। তাঁদের আক্রমণে তখন আত্মরক্ষায় ব্যস্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এরকম একটি অবস্থায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ছাতক অংশের তে- মাতায় হঠাৎ করে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার শিকার হন। তাঁরা বীর বিক্রমে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা উদ্দিন একটানা দুদিন যুদ্ধ চালিয়ে যান। আত্মবিশ্বাস আর সাহসই ছিল তাঁর বড় হাতিয়ার। ২রা ডিসেম্বর তারা উদ্দিনের বাঙ্কারে শত্রুনিক্ষিপ্ত একটি গোলা এসে পড়ে। সঙ্গে-সঙ্গে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে তারা উদ্দিনের অসাধারণ সাহস, আত্মোৎসর্গ ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড