তারাইকান্দি গণহত্যা (ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ)
তারাইকান্দি গণহত্যা (ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় সেপ্টেম্বর মাসে। এতে অন্তত ৪৫ জন মানুষ প্রাণ হারান। নিহতদের অনেকের লাশ ঘাগটিয়া নদীর স্রোতে ভেসে যায়। বাকি লাশগুলো নাদীর পাড়ে মাটিচাপা দেয়া হয়।
ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার একটি গ্রাম তারাইকান্দি। ঘটনার দিন পাকসেনারা হালুয়াঘাট থেকে এ গ্রামে আসে। তাদের পথপ্রদর্শক ছিল রাজাকার কিতাব আলী, ওসমান গণি, নূরুল ইসলাম, আবদুল হামিদসহ বেশ কয়েকজন। গ্রামে ঢুকে পাকসেনারা কয়েকটি বাড়িতে নারীদের সম্ভ্রমহানি ঘটায়। ভীতি সৃষ্টির জন্য তারা যেখানে যাকে পায় তাকেই ধরে বেঁধে ফেলে। এ থেকে গ্রামের নারীরাও বাদ পড়েননি। তারাইকান্দি মসজিদে আসা তাবলিগ জামাতের লোকজনকেও তারা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। মোট ৪৫ জন মানুষকে বেঁধে প্রথমে শারীরিক নির্যাতন করে। পরে গ্রামের পার্শ্ববর্তী ঘাগটিয়া নদীর পাড়ে দাঁড় করিয়ে গুলি চালায়। গুলিতে নিহতদের অধিকাংশের লাশ নদীর স্রোতে ভেসে যায়। বাকি লাশ নদীর তীরে পড়ে থাকে। এদিন গ্রামের পলাতক লোকজন ভয়ে লাশের কাছে আসতে পারেনি। পরদিন সন্ধ্যায় পড়ে থাকা লাশগুলো নদীর উত্তর পারে মাটিচাপা দেয়া হয়।
নিহতদের অনেকে ছিলেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তাবলিগ জামাতের লোক। দূরের লোক হওয়ায় তাদের পরিচয় জানা যায়নি। স্থানীয় ১৭ জনের নাম পরিচয় জানা গেছে। তাদের মধ্যে ১২ জন তারাইকান্দি গ্রামের। বাকিরা অন্যান্য গ্রামের। তারাইকান্দির নিহতরা হলেন- নূর মোহাম্মদ হোসেন আকন্দ (পিতা মজিদ আকন্দ), রূপজান বিবি নূর (পিতা মোহাম্মদ হোসেন আকন্দ), মিলিকজান বিবি (পিতা নূর মোহাম্মদ হোসেন আকন্দ), রহিমা খাতুন (পিতা আলা উদ্দিন আকন্দ), আবদুর রেজ্জাক (পিতা মেদর শেখ), মোমরোজ আলী (পিতা ওয়াজেদ আলী), আবদুল হেকিম (পিতা মামুদ আলী), আবুবকর সিদ্দিক আকন্দ (পিতা আক্কাছ আলী আকন্দ), রুস্তম আলী (পিতা মীরু শেখ), আকবর আলী (পিতা বরমদী শেখ), ইসহাক আলী (পিতা চান্দু মিয়া) ও জমসেদ আলী গুনা (পিতা বাজিদ উল্লাহ)। অন্যান্য গ্রামের নিহতরা হলেন- সিরাজ আলী (পিতা আদম আলী বিশ্বাস, গোবিন্দপুর, ধোবাউড়া), হায়দর আলী (পিতা ইলিম উদ্দিন ফকির, জিগাতলা, ধোবাউড়া), আবদুল লতিফ (পিতা রমজান আলী, গোবিন্দপুর), মীর কাশেম (পিতা আবদুল জলিল, গোবিন্দপুর) ও রমজান আলী (পিতা আবেদ আলী, মাটিখলা, ধোবাউড়া)। শহীদদের স্মরণে তারাইকান্দিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড