You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.22 | তারাইল বাজার গণহত্যা (কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

তারাইল বাজার গণহত্যা (কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ)

তারাইল বাজার গণহত্যা (কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২২শে জুন। এদিন পাকবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা কোটালীপাড়া উপজেলার দক্ষিণ তারাইল বাজার থেকে শুরু করে তারাকান্দ, রায়ের বাজার ও ধারাবাসাইল পর্যন্ত হিন্দু অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রামে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নারীধর্ষণসহ কয়েকশ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।
সাপ্তাহিক হাটের দিন মঙ্গলবার গোপালগঞ্জের মিনি ক্যান্টনমেন্ট থেকে একাধিক গানবোটে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকবাহিনী তারাইল বাজারের হাটুরে ও দোকানদারদের ওপর হামলা চালায়। তাদের সঙ্গে -রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর স্থানীয় দোসররা অপারেশনে অংশ নেয়। পাকিস্তানী বর্বর বাহিনী গানবোট থেকে নেমেই অতর্কিতে গুলি চালিয়ে নির্বিচারে বাজারের লোকজনকে হত্যা করে। এরপর রাজাকারদের সহায়তায় হাটের আশপাশে লুকিয়ে থাকা লোকদের বেয়নেট চার্জ করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা ভৈরব নগর, ডুমুরিয়া, তারাকান্দ ও রায়ের বাজার এলাকায় হামলা চালায়। হিন্দু অধ্যুষিত জনপদে ঢুকে তারা শতশত ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ নারীধর্ষণ ও লুটপাট চালায়। বিল-জলাবেষ্টিত ও হিন্দু অধ্যুষিত জনপদ তারাইল, তারাকান্দ, ভৈরব নগর, ভেন্নাবাড়ি ও মাচার তারা গ্রামের পশ্চিম দিকে কাকডাঙ্গা, কুরপালা ও গোপালপুর গ্রাম। এখানে কেডি গোপালপুর (কাকডাঙ্গা-গোপালপুর) এলাকায় একটি রাজাকার ক্যাম্প ছিল। এটি ছিল এলাকার সবচেয়ে বড় রাজাকার ক্যাম্প। ১৬ই জুন উপজেলার ঘাঘর বাজারে রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের একটি সভা হয়। এ সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, তারাইল, তারাকান্দ ও ধারাবাসাইল এলাকায় নৌকাযোগে অপারেশন চালানো হবে, পেছনে সাপোর্ট হিসেবে থাকবে পাকবাহিনী। রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা লাল টুপি পরে অপারেশনে অংশ নেবে। পাকবাহিনীর একাধিক গানবোট থেকে এ অপারেশন পরিচালনা করা হবে। সে অনুযায়ী পাকবাহিনীর গোপালগঞ্জ ক্যাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ২২শে জুন হাটের দিন পাকবাহিনী গানবোটে করে তারাইল পৌঁছে যায়। সঙ্গে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা যোগ দেয়। এ খবর পেয়ে এলাকার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ঢাল, সড়কি, ঝুপি, ট্যাটা, রামদা ও কাতরা নিয়ে তারাইল ও ধারাবাসাইল গ্রামে প্রস্তুতি নিতে থাকে। কিন্তু পাকবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ব্যাপক অভিযান শুরু করলে তারা নিবৃত হয়। পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা তারাইল বাজার থেকে শুরু করে তারাকান্দ ও ধারাবাসাইল পর্যন্ত হিন্দু অধ্যুষিত সব গ্রামে হামলা চালায়। তারা গানবোট থেকে বাইনাকুলারের মাধ্যমে দেখে নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। তিনটি গানবোট নিয়ে ১১ জন পাকসেনা কেডি গোপালপুর রাজাকার ক্যাম্পে আসে তারাকান্দ অভিযানের উদ্দেশ্যে। সেখানে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে তাদের স্বাগত জানায় রাজাকার আহমেদ চেয়ারম্যান, আফতাব উদ্দিন (আবতু মিয়া), বারেক মাস্টার, সোবহান মিয়া প্রমুখ। তাদের পরামর্শে পাকবাহিনী তারাকান্দ অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে ভারী মেশিনগানসহ আরো অনেক পাকসেনা তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারাকান্দায় গণহত্যা চালায়। [রবীন্দ্রনাথ অধিকারী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড