স্থানীয় মুক্তিবাহিনী তাইমুছ বাহিনী (জুড়ী, মৌলভীবাজার)
তাইমুছ বাহিনী (জুড়ী, মৌলভীবাজার) স্থানীয় একটি মুক্তিবাহিনী। এর প্রধান তাইমুছ আলী রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে আনসার বাহিনীতে প্রশিক্ষণ নিয়ে কমান্ডার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। পরবর্তীকালে আনসার বাহিনীর নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ-এর রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং সত্তরের নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্র শুরু করলে তিনি উত্তাল মার্চে ১৯ জন আনসার, মুজাহিদ ও তরুণদের নিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ কার্য শুরু করেন। স্থানীয়ভাবে তাঁরা তাইমুছ বাহিনী নামে পরিচিত ছিলেন।
কুলাউড়ার আজম বোর্ডিং- এ বসে আজিজুর রহমান এমপিএ-কে আহ্বায়ক করে যে মহকুমা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়, তাইমুছ আলী তার সদস্য ছিলেন। তাঁর অন্যতম রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন তদানীন্তন জায়ফর নগর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল খালিক চৌধুরী এবং ট্রেনিং ক্যাম্পের দুই সহকারী প্রশিক্ষক ছিলেন এম এ মোমিত আসুক ও এম এ জলিল মাসুক।
২৫শে মার্চ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারফিউ শুরু হলে ২৭শে মার্চ ছাত্র-যুবক ও জনতা কারফিউ ভাঙ্গার জন্য ছোট- ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন থানা থেকে মৌলভীবাজার মহকুমা সদরে এসে জড়ো হতে থাকে। তাইমুছ আলীর নেতৃত্বে তাঁর বাহিনী মহকুমা সদরে এসে অন্যদের সঙ্গে অবস্থান নেয় এবং শেরপুর প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এ-যুদ্ধে জুড়ীর রকীব আলী প্রথম শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। শেরপুরের প্রতিরোধযুদ্ধ ভেঙ্গে গেলে তাঁর বাহিনী নিয়ে তিনি জুড়ী চলে আসেন এবং এম এ মোমিত আসুক ও এম এ জলিল মাসুকের নেতৃত্বে একটি দলকে তিনি লেফটেন্যান্ট আজিজুর রহমানের সঙ্গে গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জ প্রতিরোধযুদ্ধে প্রেরণ করেন। সেখানে জুড়ীর দ্বিতীয় শহীদ হন আবদুর রহীম চৌধুরী। তাঁর বাহিনীতে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন- বদরুল হোসেন, ফিরোজ আহমেদ, তৈয়ব আলী, শফিক আহমদ, বশির আহমদ, মতছিন আলী, রকিব আহমদ, তজমুল আলী, আজির উদ্দিন, মজম্মিল আলী, শাহজাহান মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, নজমুল ইসলাম, হাদী হোসেন বাবুল, কুলেশ চন্দ্র চন্দ, বশারত আলী, কন্দৰ্প দে, আবদুল বশির, বাবুল খা, মর্তুজা আলী, ছাবিদ আলী, কামরুজ্জামান, ফজলুল কাদের সুরুয, আবদুর রহমান, জখই মিয়া প্রমুখ।
৭ই মে জুড়ীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অনুপ্রবেশ করলে তাইমুছ আলী তাঁর বাহিনী নিয়ে কৈলাশহর চলে যান। প্রথমে তাঁদেরকে থানায় আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেয়া হয় এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফুলতলা সীমান্ত দিয়ে তাঁর বাহিনী বেশ কয়েকটি ঝটিকা হামলা পরিচালনা করে। জেনারেল ওসমানী তাইমুছ আলীকে তাঁর কাছে তাঁর বাহিনী অর্পণ করে যুব ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটের দায়িত্ব নিতে আদেশ করেন। তাইমুছ আলী রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে দাবি করে জেনারেল ওসমানীর হাতে তাঁর বাহিনী অর্পণ করতে অস্বীকার করেন। অতঃপর অন্যদের মধ্যস্থতায় তাইমুছ আলী তাঁর বাহিনীকে ওসমানীর কাছে হস্তান্তর করে যুব ক্যাম্পের দায়িত্ব নেন। ওসমানী এ সশস্ত্র গ্রুপকে রাঘনা-রানীবাড়ি ক্যাম্পের দায়িত্ব দিয়ে এম এ মোমিত আসুককে কমান্ডার ও এম এ জলিল মাসুককে ডেপুটি কমান্ডার নিয়োগ দেন। [হাসনাইন সাজ্জাদী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড