You dont have javascript enabled! Please enable it! তাঁতিয়া কুড়ি গণকবর (তানোর, রাজশাহী) - সংগ্রামের নোটবুক

তাঁতিয়া কুড়ি গণকবর (তানোর, রাজশাহী)

তাঁতিয়া কুড়ি গণকবর (তানোর, রাজশাহী) তানোর থানা থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে তালোন্দো এলাকায় অবস্থিত। এ গণকবরে সমাহিত ১০ জন শহীদের নাম জানা গেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তানোর থানা যাতায়াতের দিক থেকে খুবই অনুন্নত ছিল। এখানে যাতায়াতের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। ইউনিয়ন রোডের রাস্তাগুলো ছিল কাঁচা। তানোর থানা থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে তালোন্দো গ্রাম। এখানে ‘তাঁতিয়া’ নামে একটি স্থান এবং ‘কুড়ি’ নামে একটি ছোট পুকুর আছে বলে এলাকাটির নাম হয়েছে তাঁতিয়া কুড়ি। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানটি ছিল ঝোপ-জঙ্গলে ভরা। কিছু আবাদি জমি ছাড়া কোনো জনবসতি ছিল না বললেই চলে। এ কারণে জায়গাটি ছিল নির্জন ও নিভৃত।
যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত না হলেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তানোরের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো তালোন্দো রাজবাড়ি রাজাকার ক্যাম্প। জুলাই মাসে স্থানীয় কিছু রাজাকার এ ক্যাম্পটি স্থাপন করে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পটি দখলের পরিকল্পনা করে কয়েকবার রেকি করেন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহায়তা ও কমান্ডার সামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকাররা রাতের আঁধারে তাঁতিয়া কুড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে আনত এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে চোখ তুলে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে গুলি করে হত্যা করত। এরপর তাঁদের কুড়ি নামক পুকুরে ফেলে দিত। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ কাজ করেছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এভাবে এখানে হত্যার শিকার ১০ জন শহীদের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁরা হলেন- খয়বর রহমান (পিতা আব্দুল সাত্তার, তানোর), আশরাফ আলী খান (পিতা জব্বার আলী খান, কালনা, মিয়াপাড়া), এমাজউদ্দিন (পিতা নজর আলী প্রামাণিক, গোকুল), কসিমুদ্দিন (মথুরা, গোকুল), সরদার মো. ফয়েজ উদ্দীন আহম্মেদ (পিতা লাহার উদ্দীন সরদার, মালশিরা), মো. খায়রুল ইসলাম (পিতা আ. কাদের বিশ্বাস, সাদিরপুর, মুন্ডুমালা), মহেশ্বর টুটু (পিতা গোপাল চন্দ্ৰ, ময়েনপুর, মুন্ডুমালাহাট), মো. মোজাম্মেল হক (পিতা সামসুল হক মণ্ডল, সাদীপুর), মো. আ. হামিদ মণ্ডল (পিতা তাহের উল্লাহ মণ্ডল, ধানোরা, মালশিরা) এবং মো. হাবিবুল্লাহ সরকার (পিতা জান মোহাম্মদ সরকার, রায়তান বড়শো, কালিগঞ্জহাট)। [আখতারুজ্জাহান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড