You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া

তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫০) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫০ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার টনকী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. আলী আমজাদ ভূঁইয়া এবং মাতার নাম হামিদা খাতুন। তিনি ১৯৬৭ সালে কসবা উপজেলার চণ্ডীদার হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে তাজুল ইসলাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যশোর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫শে মার্চ নিরীহ বাঙালিদের ওপর গণহত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়লে ফার্স্ট ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈনিকগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনিও তাঁদের সঙ্গে তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ৩০শে মার্চ সারাদিন পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যশোর ক্যান্টনমেন্টে যুদ্ধের পর সন্ধার দিকে তিনি সেনানিবাস ত্যাগ করে চৌগাছায় যান। সেখানে অন্য সহযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে কাগজপুকুরিয়ার যুদ্ধসহ বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। জুন মাসে তিনি ভারতের তেলঢালায় চলে যান এবং ফার্স্ট ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে ‘জেড’ ফোর্সে যোগ দেন। তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া একজন হেভি মিশনগানার হিসেবে দীর্ঘ ৯ মাস বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পাকসেনাদের মোকাবেলা করেন। তিনি ৮ নম্বর সেক্টরে মেজর আবু ওসমান চৌধুরী এবং ‘জেড’ ফোর্সের মেজর জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। তিনি ৩০শে জুলাই ধানুয়া-কামালপুর যুদ্ধে পাকবাহিনীর আক্রমণে চোয়ালে গুলি এবং পিঠে শেলবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভারতের গৌহাটি সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সুস্থ হয়ে তিনি পুনরায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২৮শে অক্টোবর পাকবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি শ্রীমঙ্গলের ধলই বিওপি অভিযানে তিনি অংশ নেন এবং বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবারো আহত হন। এ-যুদ্ধে তাঁর সহযোদ্ধা সিপাহি হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ হন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে আবার তিনি ১৪ই ডিসেম্বর সিলেটের এমসি কলেজে স্থাপিত হানাদারদের ক্যাম্প আক্রমণ যুদ্ধে অংশ নিয়ে পেটের ডানপাশে গুলিবিদ্ধ হন এবং ভারতের শিলং সামরিক হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাজুল ইসলাম ভূঁইয়াকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ২০০০ সালে অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পান এবং ২০০৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম মোছা. স্বপ্নাহার বেগম। তিনি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!