You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঢেকিয়া যুদ্ধ (হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ)

ঢেকিয়া যুদ্ধ (হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ) ২৬শে নভেম্বর সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। সেপ্টেম্বর মাস থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা হোসেনপুর উপজেলা শত্রুমুক্ত করার পরিকল্পনা করেন এবং সে লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে তৎপরতা অব্যাহত রাখেন। ২৬শে নভেম্বর সকালে প্যারাভাঙ্গা এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে খায়রুল জাহানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান ও মো. সেলিম শহীদ হন।
হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের পরাস্ত করে দুপাশের গ্রামে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও সাধারণ মানুষজনকে হত্যা করতে- করতে হোসেনপুরের দিকে এগিয়ে যায়। এ সংবাদ পেয়ে হোসেনপুরের মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের প্রতিরোধের জন্য নারায়ণ ডহর এলাকায় ঝোপ-জঙ্গলে অবস্থান নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। হানাদার বাহিনী কাছাকাছি আসামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর প্রবল গুলিবর্ষণ শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আচমকা আক্রমণে হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে রাস্তার পাশে অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে। হানাদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে আসেন। এ যুদ্ধে ঘাতক বাহিনীর গুলিতে স্থানীয় ধুলজুলি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী (পিতা ইয়াছিন) শহীদ হন। একই গ্রামের অপর দুই সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল মান্নান হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ঘাতক পাকবাহিনী আব্দুল মান্নানকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং বুটের তলায় পিষ্ট করে মৃত ভেবে সেখানেই ফেলে রেখে চলে যায়। অপর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাকসহ এলাকার অন্তত ১০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে ঘাতক পাকিস্তানি বাহিনী হোসেনপুরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ঢেকিয়া নামক স্থানে পৌঁছা মাত্র হানাদার বাহিনী ধুলিহর গ্রামের কমান্ডার হাবিবুর রহমান মুক্তা এবং হারেঞ্জা গ্রামের মো. গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। তাঁরা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে হানাদারদের গুলিতে হাবিবুর রহমান মুক্তা এবং মো. গিয়াস উদ্দিন শহীদ হন। এরপর হানাদার বাহিনী হোসেনপুর চলে এসে তাদের সঙ্গে ধরে আনা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক ও ১০ জন গ্রামবাসীকে চৌরাস্তা সংলগ্ন নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করে। অতঃপর হানাদার বাহিনী হোসেনপুর ছেড়ে পাকুন্দিয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পথে জাঙ্গালিয়া এলাকায় মঠখোলার কমান্ডার সাইদুর রহমান রতন তাঁর গ্রুপ নিয়ে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। কিন্তু সে যুদ্ধে কমান্ডার রতন গুলিবিদ্ধ হলে হানাদার বাহিনী অনেকটা বিনা বাধায় পাকুন্দিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। নারায়ণ ডহর ও ঢেকিয়া প্রতিরোধযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের কমান্ডার, আব্দুর রহিম, মো. রফিকুল ইসলাম, এমদাদুল হক জহিরুল ইসলাম নূরু, মো. আব্দুস সালাম, আক্কাছ আলী, নূরুল ইসলাম, সুব্রত ভট্টাচার্য নয়ন, জুবেদ আলী, আলী আশরাফ, শ্যামল চন্দ্র সরকার ছাড়াও পাকুন্দিয়া থানার কমান্ডার মফিজ উদ্দিন, হযরত মাস্টার ও তাঁদের গ্রুপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্যারাভাঙ্গা এলাকায় খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান, বীর প্রতীকত ও মো. সেলিম শহীদ হত্যার অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সৈয়দ হোসাইনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। [মার্জিয়া লিপি]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!