বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অধ্যাপক, কবি ও সাংবাদিক তরুণ সান্যাল
তরুণ সান্যাল (জন্ম ১৯৩২) ভারতের অধ্যাপক, কবি ও সাংবাদিক। তিনি ১৯৩২ সালের ২৯শে অক্টোবর পূর্ব বাংলার পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নওগাঁয় পড়াশোনা করেন। দেশ বিভাগের পর তাঁদের পরিবার কলকাতায় চলে যায়। কবি হিসেবে অধ্যাপক তরুণ সান্যালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং অত্যাচারিতের পাশে দাঁড়ানো।
১৯৭১ সালে পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক তরুণ সান্যাল তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শক্ত হাতে কলম ধরেন। মার্চে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট হলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কলকাতা জেলা কমিটি আয়োজিত প্ৰথম সভায় অন্যান্যদের মধ্যে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। এটিই ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কলকাতায় আয়োজিত প্রথম প্রকাশ্য সভা। বাংলাদেশ ও কলকাতার বুদ্ধিজীবী-লেখকদের উপস্থিতিতে মহাত্মা গান্ধী সড়কস্থ তাঁর পত্রিকার অফিসটি সদা মুখরতি ছিল। বাংলাদেশী লেখকরাও পরিচয় পত্রিকায় লিখতেন।
স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যাপক এবং হোস্টেল তত্ত্বাবধায়ক তরুণ সান্যাল ছাত্রদের বিভিন্ন কক্ষে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের থাকার বন্দোবস্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি বাংলাদেশের লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, অধ্যাপক, ডাক্তারসহ নানা পেশার মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন। তিনি কলকাতায় পাকিস্তানি ডেপুটি হাইকমিশন চত্বরে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, যা ছিল বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পতাকা উত্তোলন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের ২০শে অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করে। তিনি ২০১৭ সালের ২৮শে আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড