You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, War on Want-এর চেয়ারম্যান ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, War on Want-এর চেয়ারম্যান ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ

ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ (১৯২৩-১৯৯১) স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, War on Want-এর চেয়ারম্যান, ব্রিটেনের লেবার পার্টির আজীবন সদস্য, মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের পক্ষে অসামান্য ভূমিকা পালন করায় Friends of Liberation War সম্মাননায় ভূষিত। ১৯২৩ সালে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম ফ্রেডারিক চেসওয়ার্থ এবং মাতার নাম ডেইজি চেসওয়ার্থ। তিনি বার্মিংহামে কিং ষষ্ঠ এডওয়ার্ড স্কুল এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্সে লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল ফায়ার সার্ভিস এবং রয়েল এয়ারফোর্সে চাকরি করেন (১৯৩৯-১৯৪৫)। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সোসালিস্ট ইয়ুথ-এর সেক্রেটারি এবং ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব লেবার স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন্স-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৬৭- ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা War on Want- এর চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে তাঁর সংগঠন ছিল অন্যতম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই তিনি এর সাহায্যার্থে নানাভাবে এগিয়ে আসেন। মে মাসে ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ নামক যে একটি তহবিল গঠন করা হয়, তিনি ছিলেন তার বোর্ড অব ট্রাস্টির অন্যতম সদস্য। বস্তুত ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী ও ৭১-এ পার্লামেন্ট সদস্য জন স্টোনহাউজের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পক্ষে ৮-১০ জন পার্লামেন্ট সদস্য নিয়ে যে একটি শক্তিশালী গ্রুপ গড়ে উঠেছিল, পার্লামেন্ট সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ ঐ গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে সকল কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর সংগঠন ভারতে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য খাদ্য, ঔষধ ও অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ করেন (দ্রষ্টব্য বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ভূমিকা)। শরণার্থীদের মানবেতর অবস্থা তুলে ধরে তাদের সাহায্যার্থে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। তিনি একাধিকবার ভারতে বাঙালি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। জুন মাসে লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য মাইকেল বার্নসসহ শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে বিপুল সংখ্যক বাঙালি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণের জন্য পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হত্যা ও নিষ্ঠুর আচরণকে দায়ী করে বাংলাদেশ সংকটকে ‘বিশ্ব শান্তির ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বাংলাদেশ ট্রাজেডি ব্রিটেনবাসীর জন্য গভীর এক ‘শক’ উল্লেখ করে তিনি বাঙালি শরণার্থীদের ত্রাণার্থে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধির দাবি করেন। তিনি এও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ সংকটের গ্রহণযোগ্য সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে এইড কনসোর্টিয়ামসহ কোনো সংস্থা বা দেশের সাহায্য দেয়া ঠিক হবে না। শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনায় তাঁর সংস্থা War on Want-এর – মুজিবনগর সরকার-এর সঙ্গে কাজ করতে কোনো আপত্তি নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, যতবারই তিনি শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে ব্রিটেন থেকে এসেছেন, ততবারই বাংলাদেশ সরকার-এর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম- এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
বাংলাদেশের পক্ষে ডোনাল্ড চেসওয়ার্থের একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হলো, ২৪ পেমব্রিজ গার্ডেনের একটি বাড়ির নিচ তলায় কয়েকটি কক্ষে নামমাত্র ভাড়ায় বিচারপতি আবু সাঈদ চোধুরীকে বাংলাদেশ মিশন স্থাপনে সুযোগ করে দেয়া, যেখানে ২৭শে আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে মিশনের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। উল্লেখ্য, ঐ বাড়িটি একটি ট্রাস্ট কর্তৃক হোস্টেল হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ ছিলেন এর ওয়ার্ডেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের ২০শে অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ-কে Friends of Liberation War সম্মাননায় (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়। [হারুন-অর-রশিদ]
তথ্যসূত্র আবদুল মতিন, স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবাসী বাঙালী, লন্ডন, র‍্যাডিকেল এশিয়া পাবলিকেশন্স ১৯৮৯; আবু সাঈদ চৌধুরী, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি, ঢাকা, ইউপিএল ১৯৯০; Harun-or-Rashid, “British perspectives, pressures and publicity regarding Bangladesh, 1971”, Contemporary South Asia 1995, Oxford, 4 (2), 139-149; Indian Express, New Delhi, June 2, 1971

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড