You dont have javascript enabled! Please enable it! ডুমুরখালী যুদ্ধ (মনিরামপুর, যশোর) - সংগ্রামের নোটবুক

ডুমুরখালী যুদ্ধ (মনিরামপুর, যশোর)

ডুমুরখালী যুদ্ধ (মনিরামপুর, যশোর) সংঘটিত হয় অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে। এটি ছিল একটি ভয়াবহ যুদ্ধ। এতে একাধিক পাকসেনা হতাহত হয়।
মণিরামপুরে পাকবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর মুজাহিদ-রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিসেনাদের যে-কটি ভয়াবহ যুদ্ধ হয়, তার মধ্যে ডুমুরখালীর যুদ্ধ অন্যতম। ঝাপা বাজারের পশ্চিমে ডুমুরখালী গ্রামের অবস্থান। এ গ্রামে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি। এজন্য পাকবাহিনী ডুমুরখালী গ্রামকে শেল মেরে জ্বালিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়।
অক্টোবর মাসের প্রথম দিকের ঘটনা। তখন সকাল ৮টা। প্রতিদিনের মতো গেরিলাযোদ্ধা মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে এক দল মুক্তিযোদ্ধা বালিয়াডাঙ্গা খেয়াঘাটে যায়। এ সময় তাঁরা সংবাদ পান ৮০ জনের মতো পাকসেনা মল্লিকপুর গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে ডুমুরখালীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ সংবাদ পাওয়ামাত্র ফ্লাইট লে. ফজলুল হক তাঁর বাহিনীকে একশন নিতে নির্দেশ দেন। পাকবাহিনী ডুমুরখালী বাজারে পৌঁছলে ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের শওকত আকবরের নেতৃত্বাধীন গেরিলা বাহিনী তাদের ওপর প্রবল বেগে আক্রমণ করে। হঠাৎ আক্রমণে পাকহানাদাররা বিহ্বল হয়ে পড়ে। তারা কিছুটা পিছু হটে এবং নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে প্রস্তুত হয়ে শওকত বাহিনীর ওপর পাল্টা আঘাত হানে। আক্রমণে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। এ সময় গৌরিপুর গ্রামের মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে গেরিলাদের অপর গ্রুপ পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। দুপক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হলে তাতে নতুন করে শওকত আকবরের গ্রুপ যোগ দেয়। পার্শ্ববর্তী দশআনি গ্রামে অবস্থানরত গেরিলাদের অপর একটি গ্রুপও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। এবার পাকসেনারা ঘেরাও হয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে। দলনেতা মোশাররফ হোসেন ও তাঁর সহযোদ্ধারা জীবন তুচ্ছ করে লড়তে থাকেন। প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলার পর পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। তারা সাহায্য চেয়ে বারবার ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে ওয়ারলেসে বার্তা পাঠায়। সন্ধ্যার দিকে পাকবাহিনী আক্রমণ তীব্র করে। তাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে এড়েন্দা গ্রামের আব্দুল খালেক ও পানিছত্র গ্রামের জামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপদুটি পিছু হটতে বাধ্য হয়। পাকবাহিনী তাঁদের পিছুপিছু কোলা গ্রামের দিকে যায়। কোলা গ্রামে তারা সাধারণ মানুষজনের ওপর নির্যাতন চালায়। গ্রামের মসজিদে নামাজরত ভনু বিশ্বাসসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ভনু বিশ্বাসকে তারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। ২ জনকে ধরে নিয়ে যায়। এভাবেই শেষ হয় সেদিনের ভয়াবহ যুদ্ধ। এ-যুদ্ধে কোনো মুক্তিযোদ্ধার প্রাণহানি ঘটেনি। যুদ্ধে একাধিক পাকসেনা হতাহত হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে গৌরিপুর গ্রামের মোশররফ হোসেন খান, আবুল কাশেম খান, আব্দুল হান্নান, নূরুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন, এড়েন্দা গ্রামের আব্দুল খালেক, ঝাপা গ্রামের জামশেদ আলী, দিঘিরপাড় গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, পানিছত্র গ্রামের জামাল উদ্দিন, ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের শওকত আকবর, মদনপুর গ্রামের মশিয়ার রহমান, মতিয়ার রহমান, ডুমুরখালী গ্রামের আবুল হোসেন প্রমুখ সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। [আমিনুর রহমান মামুন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড