ডাঙ্গেরহাট গণহত্যা (পবা, রাজশাহী)
ডাঙ্গেরহাট গণহত্যা (পবা, রাজশাহী) সংঘটিত হয় ২রা ডিসেম্বর। ডাঙ্গেরহাট রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার একটি গ্রাম। ঘটনার দিন পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনী এ গ্রামে নৃশংস গণহত্যা চালায়। তারা ৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ধানের খড়ের মধ্যে ফেলে আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে মারে। ১লা ডিসেম্বর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাটে মুক্তিযোদ্ধাদের ২টি ট্রুপস অবস্থান নিয়ে রাত্রি যাপন করে। ২রা ডিসেম্বর রাজশাহী থেকে একটি ট্রাকে ৩ জন পাকসেনাসহ মোট ২০ জন আলবদর এবং অন্য একটি বাসে ৩০ জন রাজাকার আলবদর স্টেশন রোড হয়ে দারুশা যায়। সে-সময় রাজশাহী কোর্ট থেকে দারুশা হাট পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা ছিল। কাঁচা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে পাকবাহিনী দারুশা হাট ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করে। দারুশা অপারেশন শেষ করে একই রাস্তা হয়ে পাকবাহিনী ফিরবে এই ধারণায় ডাঙ্গেরহাটে মুক্তিযোদ্ধারা মাইন পোঁতার সিন্ধান্ত নেন। সেদিন মুক্তিবাহিনীর এস এম কামরুজ্জামান (রাধানগর) ও গাজিউর রহমানের (দারুশা) দল দারুশা হাটে অবস্থান করছিল। সিদ্ধান্ত মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন, ফজলুর রহমান, আব্দুর রহমান, আইয়ুব হোসেন, আবুল হোসেন, সাজ্জাদ, আলি, সাটু ও সেবাসতিয়ানের (হরিপুর) সঙ্গে আলোচনা করে মাইন স্থাপনের জন্য গাজিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়। দলে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মো. কামরুজ্জামান (বেড়পাড়া), আনোয়ার হোসেন (হরিপুর), ফজলুর রহমান (দারুশা), আব্দুর রহমান (দারুশা), আইয়ুব হোসেন, সেবাসতিয়ান (হরিপুর), শামসুল হক সম্রাট, কাজীমুদ্দিন, সাইদুর রহমান, রাজ্জাক, মাইনুদ্দীন, জয়মুদ্দিন ও আবুল হোসেন। তাঁরা ডাঙ্গেরহাট থেকে শাইরপুকুরের ১ কিলোমিটার ফাঁকা রাস্তায় বড়বট গাছের ১০ গজ দক্ষিণে রাস্তার ওপর ১টি মাইন বসান এবং সেখান থেকে আরো ৫০ গজ দক্ষিণে পরপর ৪টি মাইন বসান।
দারুশা থেকে যথারীতি ট্রাক ও বাস ফিরে আসে। মুক্তিযোদ্ধাগণ রাস্তার পাশে ফাঁকা বিলে খড়ের চকে এম্বুশ করে বসে থাকেন। প্রথম ট্রাকটি মাইন অতিক্রম করে চলে যায় কিন্তু দ্বিতীয় মাইনের ওপর পরবর্তী ট্রাকের চাকা উঠতেই সেটি বিস্ফোরিত হয় এবং ট্রাকটি শূন্যে উড়ে গিয়ে উল্টে মাটিতে পড়ে। এতে ২ জন পাকসেনা ও ৮ জন রাজাকার আলবদর নিহত হয় এবং ১০ জন রাজাকার আহত হয়। বাসটি পেছনে ছিল বলে বাসের কোনো ক্ষতি হয়নি। আলবদর-রাজাকাররা বাসে করে তাদের আহত ও নিহত সহযাত্রীদের নিয়ে ডাঙ্গেরহাট গ্রামের রাস্তার দুই পাশের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেয়।
ডাঙ্গেরহাট গণহত্যার শিকার শহীদরা হলেন- ফজলুর রহমান (পিতা মো. হাশিম উদ্দিন, কুলপাড়া), এলাহী বক্স (পিতা মো. জহুর মণ্ডল, কুলপাড়া), আজমত আলি (পিতা মো. তসের উদ্দিন, কুলপাড়া), মো. আলেফ মণ্ডল (পিতা মো. পচাই মন্ডল, কুলপাড়া) ও মো. কুদ্দুস আলি (পিতা মো. নঈমুদ্দিন, কুলপাড়া)। [হোসনে আরা খানম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড