You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.19 | ডাববাগান গণহত্যা (সাঁথিয়া, পাবনা) - সংগ্রামের নোটবুক

ডাববাগান গণহত্যা (সাঁথিয়া, পাবনা)

ডাববাগান গণহত্যা (সাঁথিয়া, পাবনা) সংঘটিত হয় ১৯শে এপ্রিল। এতে মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
পাবনা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে কাশীনাথপুর- বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন সাঁথিয়া উপজেলার পাইকরহাটি গ্রামের একটি পাড়ার নাম ডাববাগান। জায়গাটির বর্তমান নাম শহীদনগর। ১৯শে এপ্রিল বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এদিন বেলা ২.৩০টার দিকে নগরবাড়ি ঘাট থেকে পাকিস্তানি সেনারা বগুড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ডাববাগান (বর্তমান শহীদনগর)-এ অবস্থান নেন।
পাকিস্তানি সেনারা এখানে উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইপিআর সুবেদার গাজী আলী আকবর (শান্তিডাঙ্গা, কুষ্টিয়া)। যুদ্ধে প্রায় অর্ধশত পাকসেনা নিহত হয় এবং বাকিরা নগরবাড়ি ফিরে যায়। অন্যদিকে, ইপিআর হাবিলদার ইমদাদ আলী (পাবনা), নায়েক গোলাম পাঞ্জাতন (কুষ্টিয়া), মুফিজ উদ্দিন (ঢাকা), ল্যান্স নায়েক আতিয়ার রহমান (কুষ্টিয়া), সালেহ আহমদ (নোয়াখালী), সিপাহি নূর উদ্দীন (বরিশাল), মো. ইলিয়াস (রাজশাহী), আবুল ছোবহান (রাজশাহী), গোলাম মোস্তফা (সিলেট), রফিকুল ইসলাম (রাজশাহী), আবুল কাসেম (রাজশাহী), ইদ্রিস আলী (রাজশাহী), নেফারুল হক (রাজশাহী), আমির হোসেন (রাজশাহী), সাইফুর রহমান (রাজশাহী), আ. রাজ্জাক (যশোর), রমজান আলী (যশোর) এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
১৯শে এপ্রিল ডাববাগান যুদ্ধ-এর দিন রাতে পাকসেনারা নতুন করে আবার মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। এবার পাকবাহিনীর বিশাল শক্তির কাছে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে পিছু হটেন। এরপর পাকবাহিনী স্থানীয় রাজাকার মো. নওশের আলী, (সাটিয়াকোলা), মো. নফর আলী খান (দেওপাড়া), মো. কফিল মুন্সি (বেড়গ্রাম), মো. আব্দুল গফুর মৃধা, মো. ঠান্টু মিয়া, মো. আব্দুল বাছেদ (সর্বসাং বরাট), মো. আব্দুল লতিফ মুন্সি (পাইকরহাটি), ডা. মো. ফজলুল হক (কুশিয়ারা) প্রমুখের সহযোগিতায় গ্রামবাসীর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। তারা শহীদনগরসহ পার্শ্ববর্তী রামচন্দ্রবাটি, করিয়াল, সমাসনাড়ী, বড়গ্রাম, বাগজান কুশিয়ারা, চাকলা, আতবশোভা, সাটিয়াকোলা প্রভৃতি গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। বাড়ি- বাড়ি গিয়ে লোকজন ধরে এনে শহীদনগরে একটি গাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এরা শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, নারীধর্ষণ ও লুটপাটসহ নানাবিধ পৈশাচিক কর্মকাণ্ড চালায়। ডাববাগান গণহত্যা বা শহীদনগর গণহত্যা নামে পরিচিত এ গণহত্যার শিকার ১৭ জন মানুষের নাম জানা যায়। তারা হলেন- জাকের আলী শেখ (পিতা জসিম উদ্দিন শেখ, পাইকরহাটি), ডা. আফাজ উদ্দিন প্রামাণিক (করমজা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান; পিতা ছাইতুল্লাহ প্রামাণিক, সমাসনাড়ী), পিয়ার মণ্ডল (পিতা খিয়ের মণ্ডল, পাইকরহাটি), সন্তোষ প্রামাণিক (পিতা কুশাই প্রামাণিক, পাইকরহাটি), সামছুল হক (পিতা লুৎফর মুন্সি, পাইকরহাটি), জগৎ নারায়ণ বিশ্বাস (পিতা বসন্ত নারায়ণ বিশ্বাস, পাইকরহাটি), আব্দুল সেখ (পিতা জমির সেখ, পাইকরহাটি), কাজেম খাঁন (পিতা কবির খান, পাইকরহাটি), অনুকূল সিকদার (পিতা কাঙ্গলী সিকদার, বড়গ্রাম), প্রভাত সরকার (পিতা গতি সরকার, বড়গ্রাম), ভক্ত পাল (পিতা প্রশান্ত পাল, বড়গ্রাম), গোষ্ঠ প্রামাণিক (পিতা অধর প্রামাণিক, বড়গ্রাম), খোয়াজ সিকদার (পিতা জালু সিকদার, সমাসনাড়ী), মহর (পিতা আতা মোল্লা, পাইকরহাটি), শাহজাহান বিএসসি (পিতা মোতাচ্ছেম মিয়া, সৈয়দপুর), সৈয়দ আলী (শ্রীধরকুড়া) ও ফরিদা পারভিন (পিতা আব্দুল বারী খান ওরফে ফকির খান, দত্তপাড়া)। এসব শহীদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ডাববাগান জায়গাটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদনগর’। এখানে শায়িত আছেন শতশত পরিচয়হীন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। শহীদনগরে ইপিআরদের গণকরব রয়েছে। শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে ভাস্কর্য ‘বীর বাঙালি’। [মো. আবদুল মজিদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড