টেকেরহাট ক্যাম্প যুদ্ধ (রাজৈর, মাদারীপুর)
টেকেরহাট ক্যাম্প যুদ্ধ (রাজৈর, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় ৩রা ও ৪ঠা ডিসেম্বর। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা টেকেরহাট মুক্ত করতে না পারলেও পাকিস্তানি সেনারা প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যন্ত গ্রাম ও বিল এলাকার ক্যাম্প থেকে এসে পাকিস্তানি সেনাদের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি আক্রমণে প্রচণ্ড সাহস, শক্তি ও সক্ষমতা প্রদর্শন করেন। এতে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের মনোবল। সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়ে। ৭ই ডিসেম্বর রাতে তারা টেকেরহাটের ঘাঁটি ছেড়ে ফরিদপুরের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
২৭শে নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা টেকেরহাটে হানাদারদের ঘাঁটিতে দু-দফা আক্রমণ করেন। প্রথম দফার যুদ্ধ স্থায়ী হয় একদিন ও একরাত্রি। এ-যুদ্ধ পরিচালনা করেন কমান্ডার এম এ কাদের মোল্লা। সঙ্গে ছিলেন এ কে ফজলুল হক, হারুন- উর-রশিদ ফকির, মোয়াজ্জেম হোসেন মোল্লা, সাহেব আলী খালাসী প্রমুখ।
বৈলগ্রাম ব্রিজের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয় ৩রা ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে। এ-সময় বরিশালগামী পাকিস্তানি বাহিনীর গাড়িবহরের ওপর আক্রমণ করা হয়। এক ঘণ্টা স্থায়ী তীব্র যুদ্ধে সুবিধা করতে না পেরে শত্রুর গাড়িবহর পিছু হটে টেকেরহাট ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা বিকেল ৩টার দিকে টেকেরহাট ক্যাম্পের ওপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালান। মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পাকসেনা ও রাজাকাররা সারারাত গুলি চালায়। ৫ই ডিসেম্বর সকাল ৭টায় বরিশাল থেকে পাকিস্তানি সেনাদের কয়েক গাড়ি সৈন্য আটকেপড়া পাকিস্তানি সেনাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। হানাদারদের তীব্র পাল্টা আক্রমণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে নিরাপদ স্থানে সরে আসেন। যুদ্ধকালে স্থানীয় গ্রামবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার সরবরাহ করে। পাকিস্তানি সেনারা হামলা চালিয়ে কয়েকজন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
৩-৬ই ডিসেম্বর টেকেরহাট যুদ্ধে শহীদ গ্রামবাসীরা হলেন- হিলাল উদ্দিন মিয়া (বৌলগ্রাম), লালমিয়া মাতুব্বর (মাচারঙ, খালিয়া), জনৈক মহিলা (গঙ্গারামপুর) ও ভাসাই মাতুব্বর (বৌলগ্রাম)। এ-যুদ্ধে মো. সামছুল হক (বৌলগ্রাম), খোরশেদ বাওয়ালী (বৌলগ্রাম) ও আবদুল মালেক শেখ (বৌলগ্রাম) আহত হন। [শেখ নাছিমা রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড