You dont have javascript enabled! Please enable it!

টেকেরহাট নৌ-অপারেশন (রাজৈর, মাদারীপুর)

টেকেরহাট নৌ-অপারেশন (রাজৈর, মাদারীপুর) পরিচালিত হয় ১২ই অক্টোবর। এতে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অপরপক্ষে শত্রুদের একটি ফেরিলঞ্চ ডুবে যায়। ঘটনার দিন রাতে মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানাধীন টেকেরহাট ফেরিঘাটে তিন সুইসাইডাল নৌ-কমান্ডো
খবিরুজ্জামান, বীর উত্তম, হাফিজুর রহমান এবং আবদুস সামাদ এক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন। এ অভিযানে একটি ফেরিলঞ্চ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। খবিরুজ্জামান (পিতা আবদুল জব্বার মৃধা, কাজীপাড়া, বাহাদুরপুর ইউনিয়ন, উপজেলা পাংশা, জেলা রাজবাড়ী; খবিরুজ্জামানেরর প্রথম অপারেশন ছিল চট্টগ্রাম নৌবন্দরের একটি তৈলবাহী জাহাজে, দ্বিতীয় অপারেশন ছিল খুলনা জেলার চালনা নৌবন্দরে) শত্রুর গুলিতে শহীদ হন। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে খবির অন্য দুই নৌ-কমান্ডো হাফিজ ও সামাদকে নিয়ে রাজৈর থানার ইশিবপুর গ্রামে সরওয়ার হোসেন মোল্লার নেতৃত্বাধীন ক্যাম্পে আসেন। এ ক্যাম্পে টেকেরহাট নৌযুদ্ধের পরিকল্পনা করা হয়। ফতেপুর- টেকেরহাটের পূর্বপাড়ে একটি ফেরি ছিল। মাঝে ছিল একটি দোতলা লঞ্চ। পশ্চিমপাড়ে ছিল একটি একতলা লঞ্চ।
অপারেশনের জন্য তাঁরা ১২ই অক্টোবর গভীর রাতে নদীর উত্তর পাড়ে শংকরদি ঘাটের পাশ দিয়ে কুমার নদীতে নামেন। তিন নৌ-কমান্ডোকে পানিতে নামানোর দায়িত্ব ছিল সরওয়ার হোসেন মোল্লার। অপারেশন শেষে সিন্ধিয়াঘাট থেকে তাঁদের তুলে নেয়ার দায়িত্ব ছিল সেকেন্দার আলী হাওলাদার, শেখ শহিদ মিয়া ও আবদুল কাইয়ুম মীরসহ ১২ জনের একটি দলের। নদীতে কমান্ডোদের নামানো, মাইন ফিট করা, তীরে উঠানো সবকিছুর জন্য পরিকল্পনা ছিল। টেকেরহাট সিন্ধিয়াঘাটে বাধা ফেরিলঞ্চ এবং জল-পুলিশের পন্টুন ছিল আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। লক্ষ্যস্থলে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান ছিল। এসব নৌযানের সাহায্যে তারা গ্রামগঞ্জে ধ্বংসলীলা ও নির্যাতন চালাত। হানাদার বাহিনীর টহল দল অস্ত্রহাতে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখেছিল কুমার নদীর ওপর। অতি সন্তর্পণে অগ্রসর হলেও লক্ষ্যের কাছাকাছি যেতেই প্রহরারত হানাদার সৈন্যদের নজরে পড়ে যান খবিরুজ্জামান। রেকিতে ভুল হওয়ায় খবিরুজ্জামান তাঁর টার্গেট জল-পুলিশের টহলবোট খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পানি থেকে মাথা উঁচু করে টার্গেট খুঁজতে গেলে ফ্লাশ লাইটের আলোয় হানাদাররা খবিরুজ্জামানকে দেখতে পেয়ে মেশিনগান দিয়ে গুলি ছোড়ে। একঝাঁক বুলেটে ঝাঝরা হয়ে যায় তাঁর শরীর। তবে কামান্ডো হাফিজ ও সামাদ মিশন সম্পন্ন করে নিরাপদে কূলে ফিরে আসতে সক্ষম হন। আবদুস সামাদের ফিট করা লিমপেট মাইন কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরিত হলে একটি ফেরিলঞ্চ অসংখ্য টুকরো হয়ে আকাশে উড়ে যায়। ফেরিটি ডুবে যায়। ফেরিতে থাকা একজন রাজাকার আহত হয়৷
অনেক খোঁজাখুঁজি করে চারদিন পর কুমার নদীর দুই মাইল ভাঁটিতে সিন্ধিয়াঘাটের কাছে নদীর কিনারে নলখাগড়া বনের মধ্যে ভেসে ওঠে শহীদ নৌ-কমান্ডো খবিরুজ্জামান বীর উত্তম-এর অর্ধগলিত লাশ। ১৯৭৩ সালে ফরিদপুর জেলার মুজিব বাহিনী-র সহকারী কমান্ডার সাজাহান সরদার টেকেরহাট বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সিএন্ডবি মাঠের নামকরণ করেন খবিরের মাঠ। এটিকে এখন চারপাশে দেয়াল দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে। [শেখ নাছিমা রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!