You dont have javascript enabled! Please enable it!

টেপুর মাঠ গণহত্যা (গাংনী, মেহেরপুর)

টেপুর মাঠ গণহত্যা (গাংনী, মেহেরপুর) সংঘটিত হয় ১৫ই অক্টোবর। গাংনী উপজেলা সদর থেকে ৬ কিমি উত্তরে নির্জন এ প্রান্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পার্শ্ববর্তী দুই গ্রামের ৮ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে।
গাংনী উপজেলার উত্তর দিকে অবস্থিত ব্রিটিশ আমলের পরিত্যক্ত ভাটপাড়া নীলকুঠিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্তিশালী একটি দল ক্যাম্প স্থাপন করে। স্থানীয় রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সহযোগিতায় এ ভাটপাড়া ক্যাম্পের পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রায় প্রতিদিন চারপাশের গ্রামে হানা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক সাধারণ মানুষজনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নারীনির্যাতনের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটিয়ে যেতে থাকে। গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার অজুহাতে নিরীহ লোকজনকে ভাটপাড়া ক্যাম্পে ধরে এনে তারা অমানুষিক নির্যাতন চালাত। এরপর হত্যা করে পার্শ্ববর্তী কাজলা নদীতে ভাসিয়ে দিত।
১৫ই অক্টোবর খুব ভোরে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরার জন্য ভাটপাড়া ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি সৈন্যেদের একটি দল হিন্দা গ্রামে এবং আরেকটি দল নওপাড়া রওনা হয়। হিন্দা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কামালকে বাড়িতে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ঐ গ্রামের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। অতঃপর তারা ওই গ্রামের মওলা বক্সের দুই ছেলে আজিজুল ও সাবদার এবং নূর বক্স, শামসুদ্দীন, বাবর আলী ও মুনসুর আলীকে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে। এদের মধ্যে দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলে অবশিষ্ট ৪ জনকে বেঁধে টেপুর মাঠে নিয়ে আসে। হিন্দা এবং হিজলবাড়িয়ার মাঝখানে ফাঁকা নির্জন প্রান্তর টেপুর মাঠে আগে থেকেই নওপাড়ার ৪ জন মানুষকে বেঁধে আনা হয়। টেপুর মাঠে এদের আনার পর তারা দুজন করে বন্দিকে এক দড়িতে পিঠ মোড়া করে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে। হানাদাররা এভাবে ৮ জন মানুষকে হত্যা করে মাঠের মধ্যে ফেলে রাখে। মৃতদেহগুলো তিন দিন মাঠেই পড়ে থাকে। চতুর্থ দিনে সাহারবাটির কয়েকজন মানুষ মাঠে দুটি গর্ত খুঁড়ে ৪টি করে মৃতদেহ গণকবর দেয়। টেপুর মাঠ গণহত্যার শিকার ৮ জন হলেন- হিন্দা গ্রামের নূরবক্স, বাবর আলী, মুনসুর আলী ও আজিজুল হক এবং নওপাড়া গ্রামের আফসার আলী মালিথা (পিতা পাঁচু মালিথা), জবুতুল্লাহ (পিতা নূর বক্স বিশ্বাস), মজিবর রহমান (পিতা হাবিল বিশ্বাস) ও শাকের আলী (পিতা হারান মণ্ডল)। সম্প্রতি টেপুর মাঠ গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। [রফিকুর রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!