You dont have javascript enabled! Please enable it!

টেবুনিয়া সীড গোডাউন সংলগ্ন বধ্যভূমি (পাবনা সদর)

টেবুনিয়া সীড গোডাউন সংলগ্ন বধ্যভূমি (পাবনা সদর) পাবনা শহর থেকে ১০ কিমি দূরে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশীয় দালালদের সহায়তায় স্বাধীনতার পক্ষের বা সন্দেহভাজন লোকজনকে ধরে এনে প্রথমে শহরের বিভিন্ন টর্চার সেন্টারে নির্যাতন শেষে টেবুনিয়া সীড গোডাউনের পুকুর ও পার্শ্ববর্তী খালপাড়ে সারিবদ্ধ অবস্থায় গুলি করে হত্যা করত এবং মৃতদেহ সেখানে ফেলে দিত।
৭১-এর ১০ই এপ্রিল নগরবাড়ি ঘাটের পতন হলে ১১ই এপ্রিল পাকসেনারা পাবনা শহরে প্রবেশ করে সার্কিট হাউস, নূরপুর ডাকবাংলো ও ওয়াপদা ভবনে শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলে। পাবনা শহর ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমর্থক ও আওয়ামী লীগ-এর কর্মী বা সন্দেহভাজনদের দেশীয় দালালদের সহায়তায় ধরে হানাদার বাহিনী তাদের ক্যাম্পে নিয়ে এসে নির্যাতন চালিয়ে চোখ ও হাত-পা বেঁধে পাবনা শহর থেকে ১০ কিমি দূরে অবস্থিত টেবুনিয়া সীড গোডাউন সংলগ্ন এলাকার পুকুরপাড়ে নারিকেল বাগানের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করত। আবার পার্শ্ববর্তী খালের পাড়ে নিয়েও হত্যা করা হতো। কখনো বন্দিদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে- খুঁচিয়ে নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন করে হত্যা করত। স্থানীয় বাসিন্দা কফিল উদ্দিন, বাদশা মিয়া প্রমুখ এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় প্রতিদিনই টেবুনিয়া সীড গোডাউনের পুকুরপাড়ে পাকসেনারা গাড়িতে করে চোখ বেঁধে একাধিক লোককে এনে হত্যা করত। পাকসেনারা পাবনার বিশিষ্ট মোটর ব্যবসায়ী হাছেন খাঁ, রাধানগর মক্তব পাড়ার আকমল হোসেন (আকু ড্রাইভার) ও শহরের কৃষ্ণপুরের আল্লারাখা খানসহ ১৫ জনকে নূরপুর ডাকবাংলোতে দুদিন ধরে নির্যাতনের পর টেবুনিয়া বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তাদের দলে বাদশা মিয়াও ছিলেন। তার ডান হাতের কনুইয়ের ওপরে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি ঘটনাচক্রে বেঁচে যান। বীজ উৎপাদন খামারের পূর্ব ও দক্ষিণ পাশের খালপাড়ের স্থানটিও বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর টেবুনিয়া সীড উৎপাদন খামারের এখানে গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। স্থানটি যে বধ্যভূমি এটা কর্তৃপক্ষের প্রথমে জানা ছিল না। টেবুনিয়া কৃষি খামারের শ্রমিক নেতা জয়নুল আবেদীন, ইউসুফ আলী, রজব আলী, করিম ড্রাইভার, আব্দুল কুদ্দুস সাগর এবং আলাউদ্দিন সরদার বিষয়টি কৃষি খামার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে আনেন। বিষয়টি জানার পর গণকবরগুলো চিহ্নিত করা হয় এবং বধ্যভূমিকে অক্ষত রেখে কবরের পাশ দিয়ে গভীর নলকূপের ড্রেন স্থাপন করা হয়। দেশ স্বাধীনের বেশ কিছুদিন পর এ স্থানে ‘টেবুনিয়া বধ্যভূমি ও গণকবর’ নামে একটি নামফলক লাগানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সে নামফলক আর নেই। টেবুনিয়া বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে এ পর্যন্ত আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। [ছাবেদ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!