You dont have javascript enabled! Please enable it!

ডলুরা গণকবর (সুনামগঞ্জ সদর)

ডলুরা গণকবর (সুনামগঞ্জ সদর) সুনামগঞ্জ জেলার মেঘালয় সীমান্তবর্তী গারো অধ্যুষিত একটি গ্রামে অবস্থিত। এখানে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ৪৮ জন মুক্তিযোদ্ধার গণকবর রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদদের সমাহিত করার তেমন জায়গা না থাকায় সহযোদ্ধারা যেখানে সম্ভব সেখানেই তাদের কবর দিতো। জায়গা এবং সুযোগের অভাবে অনেকের লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হতো। এ অবস্থায় আনসার সদস্য আবুল কালাম ওরফে মধু মিয়া (ডলুরা) শহীদদের লাশ মর্যাদার সঙ্গে সমাহিত করার উদ্যোগ নেন। তিনি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিজের দখলে থাকা সরকারি খাস জমিকে কবরের উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচনা করেন। ১৮ই জুলাই হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বালাট সাব-সেক্টরে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন মন্তাজ মিয়া (কামলাবাজ, জামালগঞ্জ)। মধু মিয়া শহীদ মন্তাজের খবর শুনে সঙ্গীদের নিয়ে সেখানে ছুটে যান। তিনি শহীদ মন্তাজ মিয়াকে সমাহিত করার মাধ্যমে ডলুরা গণকবরের গোড়াপত্তন করেন। এরপর মধু মিয়া যেখানেই মুক্তিযোদ্ধাদের শহীদ হওয়ার খবর পেয়েছেন, সেখানেই ছুটে গেছেন। শহীদদের লাশ দাফনের পাশাপাশি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য মধু মিয়াকে আহ্বায়ক, মাওলানা মুন্সী তারু মিয়া, আফসার উদ্দিন, কিতাব আলী, আবদুর রহিম, মঙ্গল মিয়া, হযরত আলী, মফিজ উদ্দিন ও নেপু ঠাকুরকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। মাওলানা মুন্সী তারু মিয়া মুসলমান শহীদদের জানাজা পড়ানোর এবং নেপু ঠাকুর হিন্দু শহীদদের সমাহিত করার জন্য পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করতেন। এঁরাই ছিলেন মুজিবনগর সরকারের ৯ সদস্য বিশিষ্ট অনুমোদিত কমিটির সদস্য। সামান্য লেখাপড়া জানা মধু মিয়া একটি ডায়রিতে শহীদদের নাম-ঠিকানা লিখে রাখতেন। অনেক ক্ষেত্রে কাউকে দিয়ে এ তথ্যগুলো ডায়রিতে লিখিয়ে নিতেন। এ ডায়রিটি পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। মধু মিয়ার ডায়রি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে ডলুরা গণকবরে শহীদ ৪২ জন মুসলমান এবং ৬ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে সমাহিত করা হয়। তাঁদের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার শহীদরা যেমন রয়েছেন, তেমনি অন্য জেলার শহীদরাও রয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে ডলুরা ছিল বিচ্ছিন্ন একটি এলাকা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মধু মিয়ার প্রচেষ্টায় ১৯৭৯ সালে প্রশাসনের উদ্যোগে ৮২ ফুট লম্বা, ৮১ ফুট প্রস্থ এবং ৫ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে এ গণকবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয় ৷ অধিকন্তু মার্বেল পাথরে খোদাই করে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। তাঁর প্রচেষ্টায় এখানে গমনাগমনের একটি রাস্তা তৈরি হয়। বাংলাদেশে একমাত্র কুল্লাপাথর ছাড়া এত শহীদদের গণকবর আর কোথাও নেই। ২০০৪ সালের ১৫ই মার্চ মধু মিয়া মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকেও এ গণকবরে সমাহিত করা হয়। ডলুরা গণকবরে সমাহিত শহীদরা হলেন- মো. মন্তাজ মিয়া, সালাউদ্দিন, ইপিআর সদস্য মো. রহিম বখত, মো. জবান আলী, মো. তাহের আলী, মো. আবদুল হক, মো. মজিবুর রহমান, মো. নূরুল ইসলাম, মো. আবদুল করিম, মো. সুরুজ মিয়া, মো. ওয়াজেদ আলী, মো. সাজু মিয়া, মো. ধনু মিয়া, মো. ফজলুল হক, মো. সামসুল ইসলাম, মো. জয়নুল আবেদীন, মো. মরম আলী, মো. আবদুর রহমান, মো. কেন্তু মিয়া, মোস্তফা মিয়া, মো. ছত্তার মিয়া, মো. আমজান আলী, মো. সিরাজ মিয়া, মো. সামছু মিয়া, মো. তারা মিয়া, মো. আবেদ মিয়া, মো. আতর আলী, মো. লাল মিয়া, মো. চান্দু মিয়া, মো. সমুজ মিয়া, মো. সিদ্দিকুর রহমান, মো. দান মিয়া, মো. মন্নাফ মিয়া, মো. রহিম মিয়া, আলী আহমদ, মো. সিদ্দিক মিয়া, মো. এ বি সিদ্দিক, মো. ছায়েদুর রহমান, মো. রহমত আলী, মো. আবদুল হামিদ খান, মো. আব্দুল সিদ্দিক, মো. আবদুল খালেক, যোগেন্দ্র দাস, শ্রীকান্ত বাবু, হরলাল দাস, অধর দাস, অরবিন্দু রায় ও কবিন্দ্র নাথ। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!