টামটা গ্রাম যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর)
টামটা গ্রাম যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এখানকার যুদ্ধে ২ জন রাজাকার নিহত ও ৭ জন মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তাদেরও হত্যা করা হয়।
শাহরাস্তি উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে ডাকাতিয়া নদীর তীরে টামটা গ্রাম অবস্থিত। উয়ারুক রেলস্টেশনের দক্ষিণ দিকে খোদ গ্রাম হয়ে ডাকাতিয়া নদীর দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের চলাফেরা বেশি ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা হেঁটে ডাকাতিয়া হয়ে নৌকাযোগে সূচীপাড়া ক্যাম্পে অবস্থান করতেন। পাকসেনারা কুমিল্লা-চাঁদপুরে রেল যোগাযোগ ঠিক রাখার জন্য এবং অবাধে তাদের যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য সকল রেলস্টেশন এবং রেলব্রিজে সেনাক্যাম্প স্থাপন করেছিল। তারা রাজাকারদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, উয়ারুক বাজারের তাদের ক্যাম্পটি মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করতে পারে। তখন তারা টামটা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের আস্তানায় আক্রমণ করার পরিকল্পনা নেয়। ঠিক একই সময়ে পাকসেনাদের পরিকল্পনাও মুক্তিবাহিনী জেনে যায়৷ মুক্তিবাহিনী ও স্থানীয় জনসাধারণ গোপনে সংগঠিত হতে থাকে। এমতাবস্থায় ৮ই ডিসেম্বর উয়ারুক রেলস্টেশন, উয়ারুক বাজার সংলগ্ন রেললাইন এবং সিএন্ডবি রাস্তার ক্রসিং (ঘুন্টিঘর) এবং ঘুন্টিঘরের পশ্চিমে রেলব্রিজ ও সিএন্ডবি রাস্তার ব্রিজ পাকবাহিনী নিয়ন্ত্রণে নেয়। তাদের সহযোগিতায় ছিল এদেশীয় রাজাকাররা। এরপর টামটা গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন আইয়ুব আলী খান। তাঁর সহযোদ্ধা ছিলেন শহীদ উল্যাহ পাটওয়ারী, শহীদ মিজি, আবদুল কুদ্দুছ, দেলোয়ার হোসেন খাস, আবুল খায়ের, আলী আহম্মেদ প্রমুখ। টামটা গ্রাম যুদ্ধে ২ জন রাজাকার নিহত এবং ৭ জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এ ৭ জনকে ধরে উয়ারুক বড়বাড়ি নামে খ্যাত ছৈয়াল বাড়িতে নিয়ে আসার পর উত্তেজিত জনতাসহ মুক্তিসেনারা সেখান থেকে তাদের খোদ ডাকাতিয়ার পাড়ে নিয়ে আসে। সেখানে তাদের হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। [মো. মিজানুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড