ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ গণহত্যা (ঝিনাইদহ সদর)
ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ গণহত্যা (ঝিনাইদহ সদর) সংঘটিত হয় ১৮ই এপ্রিল। এতে ৬ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৫ই এপ্রিল ঝিনাইদহের বিষয়খালী ব্রিজের প্রতিরোধ ভেঙ্গে ব্রিজ সংলগ্ন বিষয়খালী বাজারে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। ১৬ই এপ্রিল তারা ঝিনাইদহ শহরে প্রবেশ করে। এদিনই বিকেলে তারা ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে প্রবেশ করে কলেজের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুর রহমান, অধ্যাপক আবদুল হালিম খান, বাবুর্চি আবুল ফজল, ইলেকট্রিশয়ান মোহাম্মদ আলীকে আটক করে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে যায়। ব্রিগেডিয়ার দুররানীর সহযোগিতায় মুক্তি পেয়ে এদিনই তারা আবার ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে ১৮ই এপ্রিল ক্যাপ্টেন ইকবালের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনীর একটি গ্রুপ কুষ্টিয়া থেকে ঝিনাইদহে এসে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ১নং গেইট ভেঙ্গে কলেজের ভেতরে প্রবেশ করে এবং চমেটো নামে একজন অবাঙালির ইঙ্গিতে অধ্যক্ষসহ ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এদিনের শহীদদের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন— লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুর রহমান (অধ্যক্ষ, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ), আবদুল হালিম খান (অধ্যাপক, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ), আবুল ফজল (অধ্যক্ষের বাবুর্চি, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ), সৈজুদ্দিন (চৌকিদার, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ) ও আবদুস সাত্তার (মালী, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ)। এরপর থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজকে তাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা স্থানীয় রাজাকার ও দালালদের সহযোগিতায় বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাধীনতাকামী অনেক মানুষকে ধরে এনে আটক রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাসে গণকবর দেয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ক্যাডেট কলেজের প্লে-গ্রাউন্ডের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ অধ্যক্ষ এম রহমানের নামে এবং অভ্যন্তরীণ মূল সড়কের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ আব্দুস সাত্তারের নামে। এছাড়া শহীদের স্মরণে একটি আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড