মুক্তিযুদ্ধে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ- বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে ইয়াহিয়া সরকার ষড়যন্ত্র শুরু করে। এতে সারা দেশের মতো ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মানুষও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং আন্দোলন শুরু করে। ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ১লা মার্চ স্থগিত ঘোষণা করা হলে ২রা মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনএর ডাক দেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সারা দেশের মানুষ আন্দোলন শুরু করে। ঝিনাইদহ সদরের মানুষও তাতে শামিল হয়। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় এবং জনগণ পাকিস্তানবিরোধী কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। ২রা মার্চ শহরে সর্বাত্মক হরতাল পালন শেষে সন্ধ্যায় মহকুমা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে টুইডির মাঠে এক বিশাল জনসভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন এ বি এম গোলাম মজিদ এমপিএ। সভায় ঘোষণা করা হয় যে, পাকিস্তান সরকারের বাঙালিবিরোধী পদক্ষেপ রুখে দাঁড়ানো হবে।
৩রা মার্চ ঝিনাইদহ কে সি কলেজ মাঠে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মো. আব্দুল হাই ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন-এর নেতা-কর্মীরা মিলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। এ পরিষদে আরো যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তারা হলেন- সিদ্দিক আহমেদ, শহিদুল আলম বকুল, জহির উদ্দীন, মনোয়ার হোসেন, নজরুল ইসলাম, মকবুল হোসেন, আব্দুস সালাম, আলিমুদ্দিন প্রমুখ। আমীর হোসেন মালিতার নেতৃত্বে গঠিত হয় –আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী-র স্থানীয় ইউনিট ইউনিটের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন নায়েব আলী, রফিকুজ্জামান, নুরুজ্জামান চৌধুরী, আব্দুর রহমান, সেকেন্দার আলী, খাইরুল লস্কর, রহমত আলী প্রমুখ। এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং বুদ্ধিজীবীরাও আন্দোলনে যোগ দেন।
বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে যে ভাষণ দেন তাতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মুক্তিযুদ্ধ অত্যাসন্ন। তাই স্থানীয় নেতৃবৃন্দের তত্ত্বাবধানে এলাকার ছাত্র-যুবকরা সংগঠিত হতে শুরু করে। ১৭ই মার্চ জে কে এম এ আজিজ এমপিএ (ঝিনাইদহ মহকুমা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি)-এর নেতৃত্বে ঝিনাইদহ সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদের কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য চারটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিগুলো হলো- ক. অর্থনৈতিক কমিটি: আহ্বায়ক এ বি এম গোলাম মজিদ এমপিএ, সদস্য নেফাউর রহমান (ভারপ্রাপ্ত এসডিও) ও আব্দুল গফুর (কোষাধ্যক্ষ, মহকুমা আওয়ামী লীগ); খ. যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও জ্বালানি কমিটি: আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মতিন, সদস্য ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদীন; গ. খাদ্য কমিটি: আহ্বায়ক নুরুন্নবী সিদ্দিকী, সদস্য ভেলু মিয়া, ফসিউর রহমান, শেখ নূরনবী ও আব্দুর রাজ্জাক এবং ঘ. যুদ্ধ পরিচালনা কমিটি: আহ্বায়ক এসডিপিও মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ। এছাড়া একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠিত হয়, যার সদস্য ছিলেন মো. কামরুজ্জামান এমএনএ ও ইকবাল আনোয়ারুল ইসলাম এমএনএ। এঁদের নির্দেশে ছাত্র- যুবকরা অস্ত্র-প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। আমীর হোসেন মালিতার নেতৃত্বে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রায় ১৫০ জন সদস্য ‘জয় বাংলা’ লিখিত টুপি পরে বাঁশের লাঠি ও কাঠের ডামি রাইফেল নিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে থাকে। ঝিনাইদহ স্টেডিয়াম ও টুইডির মাঠে (বর্তমান পৌর শিশুপার্ক) প্রশিক্ষণ চলে। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আনসার কমান্ডার গোলাম মোস্তফা, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, এডভোকেট ইউসুফ আলী, নায়েব আলী সর্দার, ক্যাডেট কলেজের অধ্যাপক আব্দুল হামিদ প্রমুখ।
২৩শে মার্চ পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে ঝিনাইদহ সংগ্রাম পরিষদ ‘বাংলাদেশ দিবস’ পালন করে। এর একদিন পর ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়। যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকবাহিনী ঝিনাইদহ আক্রমণ করবে এরূপ সংবাদ পেয়ে তা প্রতিহত করার জন্য সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আনসার ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ সম্মিলিতভাবে ঝিনাইদহ সদর থানায় ছুটে যান এবং থানায় রক্ষিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করেন। ঝিনাইদহ আনসার এডজুট্যান্ট-এর মালখানা থেকেও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা হয়। এ-সময় ঝিনাইদহের পুলিশ প্রশাসক মাহবুব উদ্দীন আহমেদ এসডিপিও পার্শ্ববর্তী মহকুমা প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ ও ছাত্র-যুবকদের সহযোগে সম্মিলিত প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন। এ বাহিনীতে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ছিলেন এ বি এম গোলাম মজিদ এমপিএ, ভারপ্রাপ্ত এসডিও নেফাউর রহমান, আমীর হোসেন মালিতা, নুরুন্নবী সিদ্দিকী, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মতিন, ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদীন, তাহজ্জদ হোসেন, মকছেদ আলী, আবুল কাসেম প্রমুখ।
২৫শে মার্চ রাতে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কয়েকটি কনভয় নিয়ে ঝিনাইদহ শহরের ওপর দিয়ে কুষ্টিয়া যায়। পরের দিন ২৬শে মার্চ সকালে সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ মুক্তিকামী জনতা সিদ্ধান্ত নেয় যে, ঝিনাইদহকে শত্রুমুক্ত রাখতে হবে। তাই যশোর থেকে যাতে আর কোনো পাকসেনা ঝিনাইদহে প্রবেশ করতে না পারে এবং কুষ্টিয়া গমনকারী পাকবাহিনী যাতে পুনরায় ঝিনাইদহে ফিরে আসতে না পারে, সেজন্য যশোর-ঝিনাইদহ রোডের বিষয়খালি ব্রিজ ও ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া রোডের গাড়াগঞ্জ ব্রিজে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়।
পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধ সংঘটিত হয় বিষয়খালি ব্রিজে। ১লা এপ্রিল পাকসেনারা যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ঝিনাইদহে আসার পথে বিষয়খালি বাজারের কিছু পূর্বে রাস্তায় ফেলে রাখা গাছের গুঁড়ি দেখে উন্মাদের মতো গুলি ছুঁড়তে থাকে। এতে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর নুরুল মুন্সী, নলিন গোসাই, শিক্ষক মায়াময় ব্যানার্জীসহ ১৪ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন এবং তিনজন আহত হন। এরপর পাকসেনারা ব্রিজের নিকট আসতেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে শুরু হয় সশস্ত্র যুদ্ধ, যা বিষয়খালি ব্রিজ যুদ্ধ- নামে পরিচিত। এ-যুদ্ধে উভয় পক্ষের অনেক সদস্য হতাহত হয়। ৩১শে মার্চ সকালে ঝিনাইদহ শহর থেকে ১২ কিমি দূরে গাড়াগঞ্জ ব্রিজে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি প্রতিরোধযুদ্ধ হয়, যা গাড়াগঞ্জ ব্রিজ প্রতিরোধযুদ্ধ নামে পরিচিত। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন মেজরসহ কয়েকজন সেনাসদস্য নিহত হয়।
১৫ই এপ্রিল পাকবাহিনী বিষয়খালি ব্রিজসংলগ্ন বাজারে প্রবেশ করে এবং স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজকেও তারা ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়া হরিশংকরপুর গ্রামেও তাদের ক্যাম্প ছিল। প্রতিরোধকারী মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বেই শহর ছেড়ে সরে দাঁড়ান। ১৬ই এপ্রিল থেকে শুরু হয় পাকবাহিনীর বাঙালি নিধন অভিযান। তাদের গুলিতে শহীদ হন ঝিনাইদহ শহরের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গফুর, গোলাম মহিউদ্দিন ও সাংবাদিক হাবিবুর রহমান। ১৮ই এপ্রিল ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ গণহত্যা-য় ক্যাডেট কলেজের অধ্যাপক আবদুল হালিম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুর রহমান, ক্যাডেট কলেজের চৌকিদার গাজী, বাবুর্চি আবুল ফজল প্রমুখসহ ৬ জন শহীদ হন।
১৭ই এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের পর এ অঞ্চলে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য গমন করেন। তাঁদের অনুপস্থিতিতে এপ্রিলের শেষ নাগাদ স্বাধীনতাবিরোধীরা শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে। এ ব্যাপারে নেতৃত্ব দেয় মাওলানা নুরুন্নবী সামদানী, বসির মজমাদার, আইনাল মিয়া, মাওলানা হাতেম আলী প্রমুখ। শহরের পিটিআই (প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) ভবনে ও চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন কে সি কলেজের ছাত্রাবাসে (বর্তমান মহিলা হোস্টেল) এদের ক্যাম্প স্থাপিত হয়। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও এরা ঘাঁটি স্থাপন করে।
পাকবাহিনী তাদের স্থানীয় দোসর ও বিহারিদের সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক, মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে বিষয়খালি বাজার ক্যাম্প, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্প ও হরিশংকরপুর গ্রাম ক্যাম্পে ধরে এনে হত্যা করে। সাধারণ গ্রামবাসীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং ক্যাম্পে ধরে এনে বহু নারীর ওপর নির্যাতন চালায়। বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি লুট করে। এর ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকে প্রাণভয়ে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় একটি বধ্যভূমি ও চারটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো চাকলা বধ্যভূমি ও গণকবর, ক্যাসেল ব্রিজ গণকবর, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ গণকবর- এবং বিষয়খালি বাজার গণকবর। ঝিনাইদহ শহরের হাটখোলা রোডের পাশে চাকলা নামক স্থানে নীলকুঠিয়ালদের ব্যবহৃত কুয়োটি পাকবাহিনী বধ্যভূমি ও গণকবর হিসেবে ব্যবহার করে। এখানে শতশত লোককে হত্যা করে তাদের লাশ কুয়োতে ফেলে দেয়া হয়। শহরের ক্যাসেল ব্রিজের উত্তর পাশের নিচু স্থানটি পাকবাহিনীর আরেকটি গণকবর হিসেবে পরিচিত। এখানে মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষের লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ-ক্যাম্পাস ও বিষয়খালি বাজারের পাশে স্কুলসংলগ্ন স্থানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য বাঙালিকে গণকবর দেয়া হয়। বেগবতী নদীর পাশের একটি গর্তে চারজন অজ্ঞাতনামা মুক্তিযোদ্ধার লাশ পাওয়া যায়। ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনী ও রাজাকার বহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। সে-সবের মধ্যে ২০শে আগস্ট — গয়েশপুর গ্রাম যুদ্ধ, ১৮ই সেপ্টেম্বর মহামায়া গ্রাম যুদ্ধ, ২৪শে অক্টোবর বেড়াশুলা গ্রামের যুদ্ধ, ১১ই নভেম্বর আঠারোমাইল-লেবুতলার যুদ্ধ, ২রা ডিসেম্বর চুটলিয়া ব্রিজ যুদ্ধ- এবং ৫ই ডিসেম্বর ডাকবাংলো-সাধুহাটির যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এসব যুদ্ধে বেশকিছু সংখ্যক পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয় এবং একজন মুক্তিসেনা শহীদ হন। পাকবাহিনীর প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়।
৬ই ডিসেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ১৩ই ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো-কোনো স্থানে কিছু সংখ্যক পাকসেনা ও রাজাকার লুকিয়ে ছিল। ৮ই ডিসেম্বর হরিশংকরপুর গ্রামে স্থাপিত ক্যাম্প থেকে এরূপ কয়েকজন পাকসেনা যশোর ক্যান্টনমেন্টের দিকে পালাতে থাকলে মুক্তিবাহিনী তাদের আক্রমণ করে। এতে তিনজন পাকসেনা নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। ১৩ই ডিসেম্বর আরেকটি ঘটনায় মুক্তিবাহিনী চারজন পাকসেনাকে হত্যা করে এবং ৩০জন সশস্ত্র রাজাকারকে বন্দি করে। উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন— সিরাজুল ইসলাম, বীর প্রতীক- (পিতা আব্দুর রহমান বেপারী, সাগান্না)।
মুক্তিযুদ্ধে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৭৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁরা হলেন— সিরাজুল ইসলাম, বীর প্রতীক (৩০শে জুলাই ধানুয়া-কামালপুর যুদ্ধে শহীদ), রুহুল আমিন (পিতা কাজী তছাবুল হোসেন, হরিশংকরপুর), আবুল বারেক (পিতা বিশারত শেখ, নরহরিদ্রা), খাইরুল জোয়ার্দার (পিতা ইজ্জতুল্লা জোয়ার্দার, পাইকপাড়া), সাধন কুমার ঘোষ (পিতা জীতেন্দ্রনাথ ঘোষ, হরিশংকরপুর), শরাফৎ হোসেন (পিতা কেরামুল শরিফ, বাজিতপুর), কাজী শাহজাহান (পিতা কাজী মসলেম, বাড়ীবাথান), গোলাম মোস্তফা (পিতা তাহের আলী শাহ, বারইকালি), আব্দুল করিম (পিতা শুকুর মাহমুদ, কংশী), মহিউদ্দিন (পিতা আকবর মালিতা, নারায়ণপুর), গোলাম হায়দার (পিতা কুতুবুদ্দিন আহম্মদ, চুটলিয়া), আমজাদ আলী (পিতা কানাই মালিতা, লাউদিয়া), ইউসুফ আলী বিশ্বাস (পিতা মোজাহার আলী বিশ্বাস, চুটলিয়া), আবদুল মোতালেব (পিতা মোহর আলী বিশ্বাস, চুটলিয়া), ইসাহাক (পিতা আজগর মণ্ডল, মহামায়া), আজিজুর রহমান (পিতা আমানত আলী, মির্জাপুর), আবুল হোসেন (পিতা ফকির মাহমুদ, মায়দরপুর), খলিলুর রহমান (পিতা হাজি আজিমউদ্দিন, খামারাইল), সদর আলী মণ্ডল (পিতা নুরুল আমীন, কোলা), আবুল কাশেম (পিতা ছাদেক আলী, হলিধানী), মতিয়ার রহমান (পিতা কুয়োত আলী, চেউনিয়া), কামাল উদ্দিন (পিতা লোকমান শেখ, শহীদ গফুর সড়ক, পৌরসভা), হরিপদ দাস (পিতা সুবল চন্দ্ৰ দাস, খর্দ ঝিনাইদহ, পৌরসভা), তারাপদ ঘোষ (পিতা বিহারী লাল ঘোষ, পবহাটি, পৌরসভা), আব্দুল গফুর (পিতা শেখ লোকমান, শহীদ গফুর সড়ক, পৌরসভা), জলিল লস্কর (পিতা আব্দুর রহমান লস্কর, কাঞ্চননগর, পৌরসভা), দুঃখী মাহমুদ (পিতা বিশারত মণ্ডল, আরাপপুর, পৌরসভা), সিরাজুল ইসলাম (পিতা আনোয়ার মিঞা, বাঘাযতীন সড়ক, পৌরসভা), নিরঞ্জন কুমার সাহা (পিতা বিজয় কুমার সাহা, বাঘাযতীন সড়ক, পৌরসভা), ইনতাজ আলী (পিতা খোরশেদ আলী বিশ্বাস, ভুটিয়ারগাতি, পৌরসভা), আব্দুস সোবহান (পিতা সুরুজউদ্দিন, কাঞ্চননগর, পৌরসভা), দাউদ আলী জোয়ার্দার (পিতা নাদের হোসেন জোয়ার্দার, পার্কপাড়া, পৌরসভা), রাম গোপাল ঘোষ (পিতা ঘটুলাল ঘোষ, পবহাটি, পৌরসভা), আনসার উদ্দিন (পিতা হাজী সবুর আলী বিশ্বাস, ভুটিয়ারগাতি, পৌরসভা), আব্দুস সাত্তার (হামদহ, পৌরসভা), হাসেম মণ্ডল (পিতা কাদের মণ্ডল, পবহাটি, পৌরসভা), কুতুবউদ্দিন (পিতা শাহদাৎ হোসেন, হামদহ, পৌরসভা), গোলাম মহিউদ্দিন (পিতা বদর আলী আহম্মদ, খর্দ ঝিনাইদহ, পৌরসভা), কাওসার আলী (পিতা রমজান জোয়ার্দার, খাজুরা, পৌরসভা), আজাদ রহমান (পিতা ভাটই জোয়ার্দার, নেবুতলা), আব্দুর রশীদ (পিতা নজির উদ্দিন শেখ, বড় খাজুরা, পৌরসভা), কামাল উদ্দিন (পিতা আনসার উদ্দিন, চান্দালী), হামেদ আলী (পিতা ওসমান শেখ, মহামায়া), আব্দুল মোতালেব (পিতা মহর আলী বিশ্বাস, চুটলিয়া; সেনাসদস্য), সৈয়দ আলী (পিতা ওসমান শেখ, মহামায়া), মহাম্মদ আলী(পিতা শুকুর আলী মণ্ডল, চরমুরারীদহ, পৌরসভা), মাহতাব মল্লিক (পিতা লালচান মল্লিক, বিষয়খালি), আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল (পিতা হাজী মাতবর আলী, হলিধানী), আব্দুস সাত্তার (হামদহ, পৌরসভা), খলিলুর রহমান (ডেফলবাড়ি), ইয়াব আলী (পিতা মো. অতুল শেখ, গোয়ালপাড়া), আব্দুল বারিক (পিতা বিশারত আলী, নরহরিদ্রা), মো. হাসেম আলী (পিতা নঈমুদ্দিন ব্যাপারী, প্রতাপপুর), নুর বকস জোয়ার্দার (পিতা কেতাব আলী, বাদপুকুর), হোসেন মণ্ডল (পিতা কাদের মণ্ডল, পবহাটি, পৌরসভা), আকবর মোল্লা (পিতা এরফান মোল্লা, খাজুরা, পৌরসভা), সেকেন্দার আলী (পিতা পাঁচু মণ্ডল, চাপড়ি, পৌরসভা), বাবর আলী (পিতা নবাই মণ্ডল, কাঞ্চননগর, পৌরসভা), আবুল কাশেম (পিতা খলিলুর রহমান, ডেফলবাড়ি), হারেছ আলী (পিতা বছির উদ্দিন, হাটগোপালপুর), এনামুল হক আলেকজান্ডার (পিতা ইকবাল আনোয়ারুল ইসলাম, গীতাঞ্জলি সড়ক, পৌরসভা), মোস্তফা কামাল (পিতা ইকবাল আনোয়ারুল ইসলাম, গীতাঞ্জলি সড়ক, পৌরসভা), সমশের আলী (পিতা আব্বাস আলী, ভুটিয়ারগাতি, পৌরসভা), আব্দুর রশিদ (পিতা সৈয়দ আলী বিশ্বাস, চোরকোল), আবুল হোসেন (পিতা ফকির মোহাম্মদ, মাইধারপুর), ইসহাক (পিতা আজাহার আলী, মহামায়া; পুলিশ সদস্য), বাবর আলী (পিতা ইউসুফ আলী মালিতা, তেঁতুলবাড়িয়া), আবদুর রাজ্জাক (পিতা সলেমান মুন্সি, উদয়পুর, পৌরসভা), সদর উদ্দিন, বীর বিক্রম- (পিতা ইবাতুল্লাহ মণ্ডল, খাজুরা, পৌরসভা), তাইজুদ্দিন (পিতা আফজেল মণ্ডল, চোরকোল), আব্দুল কুদ্দুস (ভুটিয়ারগাতি), কাজী নাজির উদ্দিন (ভুটিয়ারগাতি) এবং বসির উদ্দিন (তিওরদহ)।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে যেসব স্মারক চিহ্ন নির্মিত হয়েছে, সে-সবের মধ্যে ১লা এপ্রিল বিষয়খালীতে প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ’ ও সদরে চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম খোদাইকৃত স্মৃতিস্তম্ভ ও বঙ্গবন্ধু মুর্যাল বিশেষভাবে উল্লেযোগ্য। এছাড়া রয়েছে শহীদ মোস্তফা কামালের নামে বিষয়খালিতে প্রতিষ্ঠিত শহীদ মোস্তফা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’, শহীদ বুদ্ধিজীবী মায়াময় ব্যানার্জীর নামে প্রতিষ্ঠিত “খড়িখালি মায়াময় মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়’, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়কে শহীদ দুঃখী মাহমুদের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘দুঃখী মাহমুদ ডিগ্রী কলেজ’ এবং বিষয়খালি-খড়িখালিতে মায়াময় ব্যানার্জীর নামে স্থাপিত একটি স্মৃতিফলক। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে প্লে-গ্রাউন্ডের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ অধ্যক্ষ এম রহমানের নামে এবং ক্যাডেট কলেজ অভ্যন্তরীণ মূল সড়কের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ আব্দুস সাত্তারের নামে। এছাড়া শহীদের স্মরণে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে একটি আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। [উত্তম চক্রবর্তী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড