বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনীতিবিদ জ্যোতি বসু
জ্যোতি বসু (১৯১৪-২০১০) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনীতিবিদ। জ্যোতি বসু নামে পরিচিত জ্যোতিরিন্দ্র বসু ১৯১৪ সালের ৮ই জুলাই কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স (১৯৩৫) ও যুক্তরাজ্য থেকে বার-এট-ল ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফিরে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ গ্রহণ করেন (১৯৪০)। তিনি নবগঠিত বাংলা- আসাম রেল রোড শ্রমিক ইউনিয়নের প্রথম সেক্রেটারি (১৯৪৪), বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচিত সদস্য (১৯৪৬), ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচিত সদস্য (১৯৫১) ও পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কমিটির সেক্রেটারি (১৯৫৩-৬১) ছিলেন। তিনি ১৯৫২-৯৬ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রতিটি নির্বাচনে বিজয়ী হন। তিনি ১৯৬৭ ও ১৯৬৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে তিনি একটানা ২৩ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি প্রদান করে (২০০৭)। ২০১০ সালের ১৭ই নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশীদের প্রতি বরাবরই সহানুভূতিশীল ও শ্রদ্ধাশীল জ্যোতি বসু মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলার মুক্তিকামী মানুষের সমর্থনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণে অবদান রাখেন। স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান ও অস্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সম্মিলিত বাম ফ্রন্ট ভারত সরকারের কাছে দাবি জানায়। বিধানসভার অধিবেশনে ভারত সরকারের কাছে দাবি জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ই মে বিধানসভায় একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়।
বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ ও শরণার্থীদের সহায়তার দাবিতে তিনি সর্বদা কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণে ভারতবাসীকে উদ্ধুদ্ধ করে রাজনৈতিক ঐক্য ও জনমত গঠনে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জ্যোতি বসুকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয় (২৪শে মার্চ ২০১৩)। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড