You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.21 | ঝাউডাঙ্গা বাজার গণহত্যা (সাতক্ষীরা সদর উপজেলা) - সংগ্রামের নোটবুক

ঝাউডাঙ্গা বাজার গণহত্যা (সাতক্ষীরা সদর উপজেলা)

ঝাউডাঙ্গা বাজার গণহত্যা (সাতক্ষীরা সদর উপজেলা) সংঘটিত হয় ২১শে মে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় পাকিস্তানি হানাদার ও স্থানীয় রাজাকারদের দ্বারা সংঘটিত এ গণহত্যায় প্রায় সাড়ে ৩শ শরণার্থী শহীদ হন।
২১শে মে খুলনা ও যশোর জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত হাজার-হাজার শরণার্থী ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ-সংলগ্ন চেয়ারম্যানের খেজুরবাগানে সমবেত হয়। সেখান থেকে তারা স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ভারতে যাবে। ঝাউডাঙ্গা বাজার-সংলগ্ন এলাকায় একটি ব্রিজ ছিল। ব্রিজটি এমন একটি স্থানে অবস্থিত যে, সেখান দিয়ে নৌ ও সড়ক উভয় পথেই সচ্ছন্দে চলাচল করা যেত। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ-পথে বহু শরণার্থী নিরাপদে ভারতে যায়। ফলে নতুন শরণার্থীরা এখানে কোনো বিপদের আশঙ্কা করেনি। জনবহুল এ রাস্তায় নিয়মিত গাড়ি চলাচল করে। ফলে ঘটনার দিন গাড়ির শব্দে হানাদারদের উপস্থিতিও তারা টের পায়নি। ২১শে মে সকাল ১০-১১টার দিকে এলাকাবাসী ও খেজুরবাগানে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুটি জিপ থেকে পাকসেনা ও অবাঙালি বিহারিরা নেমে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে অধিকাংশ শরণার্থীই ঘটনাস্থলে মারা যায় এবং আহতরা দলছুট হয়ে দিশেহারার ন্যায় ছোটাছুটি শুরু করে। অল্পক্ষণের মধ্যে ঝাউডাঙ্গা বাজার-সংলগ্ন এলাকাটি লাশের স্তূপে পরিণত হয়। আহতদের গগনবিদারী চিৎকারে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে
পাকসেনারা ঘণ্টা দেড়েকের অপারেশন চালিয়ে সাতক্ষীরা চলে গেলে জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগ-এর কর্মী এবং স্থানীয় রাজাকাররা লুটপাটে মেতে ওঠে। তারা শরণার্থীদের টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ লুট করে নেয়। মৃতদের গা থেকে গহনা খুলে এবং পকেট থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও তাদের কোনো দ্বিধা ছিল না।
ঝাউডাঙ্গা বাজার গণহত্যায় সেদিন কতজন নিহত ও আহত হয়েছিল, তার সঠিক হিসাব দেয়া দুররূহ। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে শহীদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশ এবং আহতের সংখ্যা প্রায় তিনশ। শহীদ কয়েকজনের নাম হলো- কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল, তার পিতা সুধীর কুমার মণ্ডল (দেবীতলা, বটিয়াঘাটা), শরৎ মিস্ত্রি (পিতা শিবুধর মিস্ত্রি; হাটবাড়ি, বটিয়াঘাটা), বলরাম বিশ্বাস (ফুলতলা, বটিয়াঘাটা), নিশিকান্ত মণ্ডল (পিতা বাবুরাম মণ্ডল, বটিয়াঘাটা), নগেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও দেবী ব্যানার্জী। [মিজানুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড