You dont have javascript enabled! Please enable it!

জৈন্তাপুর রাজবাড়ি যুদ্ধ (জৈন্তাপুর, সিলেট)

জৈন্তাপুর রাজবাড়ি যুদ্ধ (জৈন্তাপুর, সিলেট) সংঘটিত হয় ৮ই জুলাই। এতে ১০-১৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। অপরদিকে ৭-৮ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। সিলেট জেলার পূর্ব প্রান্তের একটি উপজেলা জৈন্তাপুর। সীমান্তের এপারে জৈন্তাপুর এবং ওপারে ভারতের ডাউকি। সিলেট শহরের উত্তর-পূর্বে জৈন্তাপুর অবস্থিত। এর দক্ষিণ- পূর্বে কানাইঘাট এবং পশ্চিমে গোয়াইনঘাট উপজেলা। জেলা শহর থেকে এ জৈন্তাপুর উপজেলার দূরত্ব ২৬ মাইল। মুক্তিযুদ্ধের সময় জৈন্তাপুর ৫নং সেক্টরের মুক্তাপুর সাব- সেক্টরের অধীনে ছিল।
মে মাসের শেষের দিকে স্থানীয় কিছু রাজাকারের সহযোগিতায় ক্যাপ্টেন হামিদের নেতৃত্বে পাকসেনারা সারিঘাট হয়ে জৈন্তাপুরে প্রবেশ করে। তারা জৈন্তাপুর রাজবাড়ি ও জৈন্তা বাজারে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। তাদের দলে আনুমানিক ১০০-১৫০ সৈন্য ছিল। হানাদাররা ক্যাম্প স্থাপন করে উপজেলার অধিকাংশ স্থান পুড়িয়ে দেয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধারা আত্মগোপন করতে না পারে। জৈন্তাপুরের আশপাশের মানুষের সিলেটের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে এ ক্যাম্প সমস্যার সৃষ্টি করে। এ কারণে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালানো এবং জৈন্তাপুর দখলে নেয়া মুক্তিবাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
৮ই জুলাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন মুত্তালিব ও বিএসএফ কামান্ডার জয়ন্ত কুমার সেনের যৌথ নেতৃত্বে ডাউকি ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা জৈন্তাপুরে অপারেশন পরিচালনা করেন। বেশ কিছুদিন থেকে এ অপারেশনের পরিকল্পা চলছিল। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ৭ই জুলাই ডাউকি থেকে মুক্তিবাহিনীর বিরাট একটি দল জৈন্তাপুর আক্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ৮ই জুলাই ভোরবেলা তাঁরা জৈন্তাপুরের আশপাশে অবস্থান গ্রহণ করেন। জৈন্তাপুর রাজবাড়িতে যেখানে পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্যাম্প স্থাপন করেছিল, সেখানেই প্রথমে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হতভম্ব হয়ে যায়। তারা প্রতিরোধের আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এ-যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনী সীমান্তের ওপার থেকে মর্টারের গোলাবর্ষণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে। এখানে ১০-১৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। অরপদিকে ৭-৮ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। ক্যাপ্টেন মুত্তালিব আহত হলে ভারতীয় সৈন্যরা তাঁকে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যান। পরবর্তীকালে চিকিৎসার জন্য তাঁকে শিলং পাঠিয়ে দেয়া হয়। ১০ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদাররা হরিপুর হয়ে জৈন্তাপুর ত্যাগ করে এবং এদিনই জৈন্তাপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। [তপন পালিত]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!