জোড়পুকুরিয়া গণহত্যা (গাংনী, মেহেরপুর)
জোড়পুকুরিয়া গণহত্যা (গাংনী, মেহেরপুর) সংঘটিত হয় ২৮শে জুলাই। এতে ভারতগামী শতাধিক শরণার্থী নিষ্ঠুর হত্যার শিকার হন।
জোড়পুকুরিয়া গ্রামটি গাংনী উপজেলা সদর থেকে ৫ কিমি পশ্চিমে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের দুপাশে অবস্থিত। এ গ্রামের ওপর দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ দিকের কাঁচা রাস্তাটি তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ রাস্তাটি দূরদূরান্তের দেশত্যাগী শরণার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভিটেমাটি ছাড়া শরণার্থীরা যেমন জোড়পুকুরিয়া পর্যন্ত আসার পর এ কর্দমাক্ত দুর্গম পথটি ধরে তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্ত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিত, ঠিক তেমনি আবার ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারাও এ পথে এসে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন।
তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্ত থেকে একদল মুক্তিযোদ্ধা এ কাঁচা রাস্তা ধরে জোড়পুকুরিয়া হয়ে ঝিনাইদহ অঞ্চলে বড় ধরনের এক অপারেশনে যাবেন এ খবর পেয়ে মেহেরপুর থেকে পাকিস্তানি সৈন্যের একটি বহর ২৮শে জুলাই ভোররাতে জোড়পুকুরিয়ায় মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের দুপাশে এম্বুশ পেতে অপেক্ষায় থাকে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপক্ষোয় থাকলেও ঘটনাক্রমে তাদের পাতা ফাঁদে আটকা পড়ে দেশত্যাগী প্রায় পাঁচ শতাধিক শরণার্থী। তাদের অধিকাংশ ছিল মাগুরা এবং ফরিদপুর অঞ্চলের। একযোগে গর্জে ওঠে হানাদারদের আগ্নেয়াস্ত্র। সঙ্গে-সঙ্গে নাম না জানা শতাধিক শরণার্থী ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে। অনেকেই আহত হয়ে গড়িয়ে পড়ে রাস্তার দুপাশের গর্তে জমে থাকা পানির মধ্যে। প্রাণে বেঁচে যাওয়া শরণার্থীদের অনেকে ঐ দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যেই দুর্গম কর্দমাক্ত কাঁচা রাস্তা এবং মাঠঘাট পেরিয়ে তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। গুলিতে নিহত হতভাগ্য শরণার্থীদের মরদেহ পাকিস্তানি সৈন্যরা ট্রাকে তুলে নিয়ে যায় অনতিদূরে খলিশাকুণ্ডিতে। সেখানে মাথাভাঙ্গা নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দেয়া হয় অনেকের মৃতদেহ। অনেকের মৃতদেহ রাস্তার পাশে কাদার মধ্যেই পড়ে থাকে, যা শেয়াল-কুকুরের খাদ্যে পরিণত হয়।
জোড়পুকুরিয়া গণহত্যায় পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহীদদের সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব নয়। মেহেরপুর জেলার সবচেয়ে মর্মান্তিক ও বৃহৎ এ গণহত্যার স্মরণে কোনো স্মারক বা স্মৃতিস্তম্ভ এ পর্যন্ত নির্মিত হয়নি। [রফিকুর রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড