বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সমাজসেবী ও উন্নয়ন কর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস
জুলিয়ান ফ্রান্সিস (জন্ম ১৯৪৫) সমাজসেবী ও উন্নয়ন কর্মী, অক্সফামের সাবেক কর্মকর্তা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতে বাঙালি শরণার্থীদের মধ্যে অক্সফামের ত্রাণ তৎপরতার প্রধান সমন্বয়ক, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা পালনকারী, বাংলাদেশের ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ ও নাগরিকত্ব প্রাপ্ত যুক্তরাজ্যের অধিবাসী।
জুলিয়ান হেনরি ফ্রান্সিস ১৯৪৫ সালের ২৯শে এপ্রিল যুক্তরাজ্যের মলভার্নে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮-৬২ সাল পর্যন্ত ওয়েস্টমিনস্টার লন্ডনের স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি মেরিস্ট উড কলেজ থেকে ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ব্রিটিশ বেসরকারি সাহায্য সংস্থা অক্সফাম-এর ত্রাণকার্য বিষয়ক সমন্বয়ক হিসেবে জুলিয়ান ফ্রান্সিস ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের মধ্যে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ত্রাণতৎপরতা পরিচালনা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির অভিজ্ঞতা বর্ণনা আকারে তুলে ধরে অক্সফাম বাংলাদেশের শরণার্থীদের দুর্বিষহ জীবনের ওপর টেস্টিমনি অফ সিক্সটি নামে যে ডকুমেন্টটি প্রকাশ (অক্টোবর ১৯৭১) এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং নীতিনির্ধারকের কাছে প্রচার করেছিল, তা প্রস্তুত করণে জুলিয়ান ফ্রান্সিস গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এ প্রচারপত্রটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
স্বাধীনতার পর শরণার্থীদের পুনর্বাসন কাজে সহায়তা দানের জন্য তিনি ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃচালুর প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে তিনি যুক্তরাজ্য অক্সফামের প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেদেশ থেকে কয়েকটি ফেরি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। এক পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশের দারিদ্র্যপীড়িত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োগ করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে নিজেকে যুক্ত করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছেন এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ জুলিয়ান ফ্রান্সিস-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দারিদ্র্যমোচন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাজ্য সরকার কর্তৃক ২০১৯ সালে তাঁকে ‘ওবিই” খেতাবে ভূষিত করা হয়। [হারুন-অর-রশিদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড