You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.19 | জিগাতলা যুদ্ধ (ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ) - সংগ্রামের নোটবুক

জিগাতলা যুদ্ধ (ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ)

জিগাতলা যুদ্ধ (ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ১৯শে জুলাই। ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামের কাছে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত এ-যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
ভারতের শিববাড়ি ক্যাম্পে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর ছিল যে, ১৯শে জুলাই পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল হালুয়াঘাট থেকে ঘোষগাঁও বাজার পর্যন্ত টহল দিতে আসবে। এ সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। আক্রমণের উদ্দেশ্যে শিববাড়ি থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আলতাব কোম্পানির আইউব আলীর প্লাটুন ও চুন্নু কোম্পানির আবদুর রহিম মিন্টুর প্লাটুন ঘোষগাঁও এলাকায় আসে। বাংলাদেশে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধারা ঘোষগাঁও বাজারের রাস্তা ধরে এগুতে থাকেন। জিগাতলা গ্রামে রাস্তায় একটি বাড়ির বাঁক ঘুরে পূর্বদিকে যেতে হতো। বাঁক ঘোরার সময় মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনারা পরস্পরের মুখোমুখি হলে উভয় পক্ষ হতচকিত হয়ে যায়। দুই দল রাস্তার নিচে দুদিকে গড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম ফেরদৌস (গ্রাম ধলা, উপজেলা পূর্বধলা, জেলা নেত্রকোনা) ও গোকুল দেবনাথ (শাহবাজপুর, পূর্বধলা) পাকিস্তানিদের দিকে পড়ে যান। এর মধ্যে দুপক্ষে যুদ্ধ শুরু হয়। রাস্তা মাঝখানে রেখে উভয় পক্ষে গুলি বিনিময় হতে থাকে। যুদ্ধ দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত চলে। সন্ধ্যার আগে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে সরতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে সকলেই সরে পড়েন। কিন্তু আমিরুল ইসলাম ফেরদৌস ও গোকুল দেবনাথ সরতে পারেননি। তাঁরা ক্রলিং করে পাশের একটি কচুক্ষেতে আশ্রয় নেন। এক সময় তাঁরা পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়েন। পাকসেনারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁদের হত্যা করে লাশ সেখানেই ফেলে যায়। পরে সীমান্তবর্তী দিঘলবাগ গ্রামের শেষ প্রান্তে তাঁদের সমাহিত করা হয়। এ-যুদ্ধের পর পাকবাহিনী জিগাতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার পরিত্যক্ত বাড়িতে গোপন ক্যাম্প স্থাপন করে। রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ায় পরিবারের সকল সদস্য বাড়িঘর ফেলে পলাতক ছিলেন। গোপন ক্যাম্প স্থাপনের পর একদিন রফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার পিতা মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বাড়িতে এলে রাজাকারদের ইন্ধনে মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া, তাঁর সঙ্গে আসা আবদুল মোত্তালেব ও মিস্ত্রির বাপ নামে একজন মোট ৩ জনকে পাকসেনারা গুলি করে হত্যা করে। শেষ পর্যন্ত ৫ই ডিসেম্বর রাতে পাকসেনারা জিগাতলা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে হালুয়াঘাট যেতে বাধ্য হয়। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড