You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক জাহাঙ্গীর হোসেন

জাহাঙ্গীর হোসেন, বীর প্রতীক সিপাহি ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের দিনারের পোল এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল মজিদ মোল্লা, মাতার নাম ফাতেমা বেগম। পিতা-মাতার দুই পুত্র সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। গ্রামের স্কুল থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে এ আর খান স্কুল থেকে ১৯৬৯ সালে এসএসসি পাস করেন। সুঠাম দেহের অধিকারী জাহাঙ্গীর হোসেন মাধ্যমিক পাশ করে ইপিআর-এ চাকরি নেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি চট্টগ্রাম ইপিআর সেক্টরের অধীন ১৪নং উইংয়ের রামগড়ে কর্মরত ছিলেন।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শুরু হলে রামগড়ে অবস্থানরত ইপিআর সৈন্যরা চট্টগ্রাম থেকে ওয়ারলেসে মেসেজ পেয়ে মেজর রফিকের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেন। ২৬শে মার্চ তাঁরা কুমিরায় অবস্থান নেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রতিরোধে কুমিরা যুদ্ধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার অন্তর্গত কুমিরা চট্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২৬-২৮শে মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে ইপিআরের যুদ্ধ হয়। ২৬শে মার্চ চট্টগ্রামে অবস্থানরত ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম(পরে মেজর) জানতে পারেন যে, কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে পাকসেনা লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহপুর খানের নেতৃত্বে ৫৩ ব্রিগেড চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ক্যাপ্টেন রফিকের নির্দেশে সিপাহি জাহাঙ্গীর হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিরায় প্রতিরোধ বাংকার তৈরি করেন। রাস্তায় ব্যারিকেড থাকায় পাকিস্তানি সৈন্যদের কুমিরা পৌছতে বেশ সময় লাগে। ২৬শে মার্চ সন্ধ্যায় পাকিস্তানি বাহিনী কুমিরায় বাংকারের আওতায় পৌঁছে গাড়ি থামিয়ে ব্যারিকেড সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে এ সুযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের সবগুলো অস্ত্র একযোগে গর্জে ওঠে। প্রায় দুঘণ্টার যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের অনেকে হতাহত হয় এবং বাকিরা পিছু হটে। ২৭শে মার্চ সারাদিন থেমে-থেমে যুদ্ধ হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ ফুরিয়ে আসতে শুরু করে। ২৮শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী অনেক শক্তি সঞ্চয় করে সড়ক ও নৌ পথে আক্রমণ করে। সিপাহি জাহাঙ্গীর হোসেন অসীম সাহস নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এ আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার শাহপুর খান এবং একজন লেফটেন্যান্টসহ ১৫২ জন সৈন্য নিহত হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে শত্রুর গুলিতে সিপাহি জাহাঙ্গীর হোসেনসহ ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
কুমিরা যুদ্ধে জাহাঙ্গীর হোসেনের বীরত্বপূর্ণ অবদান ও জীবন উৎসর্গের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ (মরণোত্তর) উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!