মুক্তিযুদ্ধে জাহাজমারা যুদ্ধ (ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল)
জাহাজমারা যুদ্ধ (ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ১১ই আগস্ট। এতে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা ওরাজাকার নিহত হয়। পাকবাহিনীর দুটি বড় জাহাজ ধ্বংস হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলা-বারুদ হস্তগত করেন।
জুলাই মাসের শেষদিকে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের দমনের লক্ষ্যে একটি বড় ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। তারা উত্তরবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় নিজস্ব বাহিনীর মধ্যে অস্ত্র সরবরাহের জন্য অস্ত্র ও গোলা বারুদের এক বিশাল চালানসহ ঐ এলাকায় সাতটি জাহাজ প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়। অস্ত্রবোঝাই জাহাজগুলো উত্তরবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় পৌঁছলে ঐ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের ঘায়েল করা সহজ হবে বলে হানাদার বাহিনী মনে করে। এ লক্ষ্যে তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে অস্ত্র বোঝাই করে সাতটি জাহাজ উত্তরবঙ্গের দিকে প্রেরণ করে। আগস্ট মাসের প্রথম দিকে মুক্তিবাহিনী গোপন সূত্রে এ সংবাদ জানতে পারে এবং নদীপথে টহল দিয়ে জাহাজের রেকি করতে থাকে। ৯ই আগস্ট জাহাজ বহরটি ধলেশ্বরী নদীর সিরাজকান্দির কাছাকাছি এসে নোঙ্গর করে। সাতটি জাহাজের মধ্যে দুটি বৃহৎ আকারের, অন্য পাঁচটি মাঝারি ধরনের। বড় দুটি জাহাজ এবং মাঝারি ধরনের দুটি জাহাজের নাম হলো এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এলসি-৩, এসটি রাজন, পিএল-৭ ও এলসি-৪। এ জাহাজ সাতটি ছাড়াও আরো দুটি ছোট জাহাজ, একটি পানি মাপার জাহাজ এবং ১১টি স্পিডবোট ছিল। এসটি রাজনের সারেং ছিলেন মির্জাপুর উপজেলার ওয়ায়েসি পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোহর আলী এবং এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এলসি-৩ জাহাজের সারেং ছিলেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা।
গোলাম মোস্তফার এক ভাই মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। এজন্য পাকবাহিনী তাঁর গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং তাঁকে চারমাস আটক রাখে। সে-সময় যথেষ্ট সংখ্যক বাঙালি সারেং না থাকার কারণে অস্ত্রভর্তি জাহাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য তারা মোস্তফাকে মুক্তি দেয়। মোহর আলী ও গোলাম মোস্তফা এই দুই বাঙালি সারেং অস্ত্রবাহী জাহাজের সংবাদ গোপনে মুক্তিবাহিনীকে জানিয়ে দেন। অস্ত্রবাহী এই জাহাজ বহরের খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনীর স্থানীয় গ্রুপ কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব তা আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। জাহাজের বর্তমান অবস্থান এবং পাহারা পদ্ধতি বিষয়ে তিনি খোঁজ-খবর নেন। প্রাথমিক তথ্য থেকে তিনি জানতে পারেন, নদীতে প্রবল স্রোত থাকায় জাহাজগুলো শুধুমাত্র জোয়ারের সময় অগ্রসর হয়, বাকি সময় নিরাপদ অবস্থান দেখে নোঙ্গর করা অবস্থায় থাকে। ভূঞাপুরের আশেপাশে মুক্তিযোদ্ধাদের সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়ে কমান্ডার হাবিব পাকসেনাদের জাহাজের কাছাকাছি অবস্থান নিয়ে তাদের গতিবিধি আঁচ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঐদিন তাদের খুব একটা অগ্রসর হতে দেখা যায় না। পরদিন ১০ই আগস্ট সকালে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে জাহাজগুলোর যাত্রার খবর পেয়ে কমান্ডার হাবিব খানিকটা উত্তর দিকে এগিয়ে যান এবং সহযোদ্ধাদের নিয়ে নদীর তীরে একটি বাড়ির আড়ালে অবস্থান নেন। অসীম ধৈর্য, সাহস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে তাঁরা গোপন অবস্থানে সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। তথ্য সংগ্রহকারী দল স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে জানতে পারেন, বিশাল এই জাহাজগুলোকে উত্তরদিকে যেতে হলে মাটিকাটা বাজারের নিকটবর্তী সিরাজকান্দি গ্রামের নদীর কোলঘেঁষে যেতে হবে।
অসীম সাহসী কমান্ডার হাবিব তাঁর কোম্পানিসহ মাটিকাটা বাজারের কিছুটা দক্ষিণে অবস্থান নেন। ত্রিপল দিয়ে ঢাকা বৃহদাকার জাহাজ দুটির সম্মুখভাগে মেশিনগান বসানো দেখে তিনি অনুমান করেন ঐ দুটি জাহাজে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রশস্ত্র থাকার সম্ভবনা বেশি। প্রয়োজনীয় রেকি শেষে তিনি সহযোদ্ধাদের এ বিষয়ে ব্রিফিং দিয়ে আক্রমণে প্রত্যেকের অবস্থান নির্দিষ্ট করেন এবং তিনি গুলি না চালানো পর্যন্ত কেউ যাতে গুলি না ছোড়ে এই নির্দেশ দেন। যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে কমান্ডার হাবিব মাটিকাটা বাজারের দক্ষিণ দিক থেকে বাজার পর্যন্ত এলাকায় সহযোদ্ধাদের নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। সহযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন জামশেদ আলী শেখ, আবু হানিফ, গোলাম নবী তরফদার, আবদুস সামাদ গামা, হোসেন আলী, দেলোয়ার হোসেন, সাইদুর রহমান, মকবুল হোসেন, আলী আকবর, আবদুস সালাম, সোহরাব, আব্দুল কদ্দুস, মীর শাহজাহান, মঞ্জুরুল ইসলাম, বেলায়েত হোসেন, সৈয়দ মুজিবর রহমান, লুৎফর রহমান, মোতাহার আলী মিঞা, সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আব্দুল হামিদ প্রমুখ।
আবুল হাসনাত মুক্তা এবং আব্দুল বাছেত এমএ কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা এ-সময় মাটিকাটা বাজারে অবস্থান করছিলেন। বাজারের উত্তর দিকের বাঁধে লুৎফর রহমান, বারী মাস্টার, লুৎফর রহমান লুদা (কাজিপুর), কে এম শামছুল আলম (ময়মনসিংহ), আমিনুর রহমান তালুকদার, সিরাজুল হক শফি (পুলিশ), আবদুল জলিল, ফয়জুর রহমান, হারুন, বাদল, তোফাজ্জল হোসেন খান কোম্পানিসহ আরো অনেক ছোট-বড় কোম্পানি পূর্বাহ্ণেই যথাযথভাবে এলার্ট ছিল। আবদুল বাছেত তাঁর কোম্পানি নিয়ে পশ্চিমে ধলেশ্বরীর দিকে রওনা দেন। এরপর মাটিকাটা বাজারের বাঁধে আবুল হাসনাত মুক্তার অবস্থানের দক্ষিণে পজিশন নেন। গ্রুপ কমান্ডার মাস্টার শামছুল আলমের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীর অপর দল নদীর পূর্ব তীরে ট্রেঞ্চ খনন করে সেখানে পজিশন নিয়ে পাকবাহিনীর জাহাজের আগমনের অপেক্ষায় থাকে। ফলে দুটি কোম্পানির অবস্থান পাশাপাশি হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ও মনোবল বেড়ে যায়।
১১ই আগস্ট দুপুর ২টার পর জাহাজগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের পজিশনের দিকে এগোতে থাকে। এদিকে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারা অধীর হয়ে ওঠেন এবং কমান্ডারের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন। কমান্ডার হাবিব সহযোদ্ধাদের উত্তেজিত না হয়ে নিজ-নিজ অবস্থানে অটল থাকার নির্দেশ দেন। হানাদারদের শক্তি ও অস্ত্র অনেক বেশি ভেবে তিনি ঠাণ্ডা মাথায় আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে তিনিও উত্তেজিত হয়ে পড়ছিলেন। মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা তাঁকে তখন অসীম সাহসী করে তুলেছিল। জাহাজ উত্তর দিকে যাচ্ছিল বলে তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে ক্রলিং করে নদীর পাড় ধরে এগিয়ে যান। তাঁদের কাছে অস্ত্র বলতে ছিল ২টি এলএমজি, ১টি ২ ইঞ্চি মর্টার এবং কিছু চাইনিজ ৩০৩ রাইফেল। পেছনে অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ছিল ৪টি এলএমজি, ২টি ২ ইঞ্চি মর্টার, ১টি রকেট লঞ্চার এবং কিছু রাইফেল।
মুক্তিযোদ্ধারা নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থান নেন। নদীর মাঝে চর জেগে ওঠায় পূর্ব তীরের কাছাকাছি অবস্থানে পানির গভীরতা বেশি ছিল। আর জাহাজগুলো পূর্ব তীর ঘেঁষে উত্তর দিকে যাচ্ছিল। ছোট তিনটি জাহাজ একে-একে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান অতিক্রম করে চলে যাওয়ার পরও কমান্ডার হাবিব আক্রমণের নির্দেশ দেননি। যোদ্ধারা এদিকে লক্ষ্যবস্তুর দিকে হাতিয়ার টার্গেট করে ট্রিগারে আঙ্গুল রেখে উত্তেজনায় অপেক্ষমাণ। তারপলিনে ঢাকা দুটি বড় জাহাজ এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এলসি-৩ এবং এসটি রাজন সামনের দিকে এগিয়ে আসছিল। জাহাজের ওপর ২টি মেশিনগানের পাশে দাঁড়িয়ে শত্রুসেনারা পাহারা দিচ্ছিল। জাহাজ দুটি মুক্তিবাহিনীর আয়ত্তের মধ্যে আসতেই কমান্ডার হাবিবের এলএমজি গর্জে ওঠে। সঙ্গে-সঙ্গে সহযোদ্ধারা দুটি জাহাজের ওপর প্রচণ্ড গুলি ছুড়তে শুরু করেন। শামছুল আলমের কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারাও একই সঙ্গে আক্রমণ করেন। সঙ্গে-সঙ্গে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাও গুলিবর্ষণ শুরু করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রেজাউল করিম তরফদার ১০-১২টি মর্টারের গুলি অব্যর্থভাবে জাহাজে নিক্ষেপ করেন।
মঞ্জু নামে অপর একজন মুক্তিযোদ্ধা প্রায় ২০টির মতো রকেট শেল নিক্ষেপ করেন। গোলাম নবী তরফদারও তাঁর ২ ইঞ্চি মর্টার দিয়ে অব্যর্থভাবে জাহাজে ১৫-২০টি আঘাত করেন। এতে জাহাজের সারেং-এর কেবিন ও নীচতলায় শত্রুসেনাদের অবস্থান ঝাঁঝরা হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পাকবাহিনী বামদিকে ঘুরে পালানোর চেষ্টা করলে বড় দুটি জাহাজ এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এলসি-৩ এবং এসটি রাজন বালুর চরে আটকে যায়। বাকি পাঁচটি জাহাজ দ্রুত গতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকসেনারা স্পিডবোড নামিয়ে জাহাজের পশ্চিম আড়াল থেকে পালিয়ে যায়। উত্তরদিকে যাওয়া ছোট জাহাজ তিনটি দ্রুত সিরাজগঞ্জের দিকে সরে যায়। অপর দুটি ছোট জাহাজ দ্রুত দক্ষিণে চলে যায়। শত্রুসেনারা জাহাজ থেকে পালানোর পর ৩ জন নাবিক জাহাজে আগুন লাগার ভয়ে বাঁচাও-বাঁচাও বলে চিৎকার করে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধারা তখন গুলি চালানো বন্ধ করেন। শত্রুসেনাদের সাড়া-শব্দ না পেয়ে কমান্ডার হাবিব নাবিকদের উদ্ধার করতে মুক্তিযোদ্ধা হাসানকে নির্দেশ দেন। হাসান এক মাইল ভাটি থেকে ছোট নৌকায় দুজন নাবিককে আধমরা অবস্থায় উদ্ধার করেন। আবদুল বাছেত একজন সারেংকে ভাটি থেকে তুলে আনেন। অপর একজন সারেং সাঁতরে ভাটিতে নিকরাইলের কাছে মাটিকাটা বাজারে এসে ওঠেন। তাদের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকবাহিনীর সহকারী কমান্ডার আতাউল্লাহ এবং সুবেদার আব্দুর রহিম খানসহ জাহাজে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়েছে।
কমান্ডার হাবিবের নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সারেং গোলাম মোস্তফাকে নিয়ে জাহাজে ওঠেন এবং জাহাজ ভর্তি অস্ত্রশস্ত্র দেখতে পান। এরপর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নামানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধা ও সেচ্ছাসেবকগণ নৌকা নিয়ে যান। জাহাজের অস্ত্র খালাসের সময় অস্ত্র বোঝাই নৌকাগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন খোদাবক্স মিঞা, শামছুল হক মিঞা, মাসুদুল হক মাসুদ, ইকরামুদ্দিন তারা মৃধা, বুদ্দু খাঁ, আব্দুল হালিম, আব্দুল বাছেদ মাস্টার, আজাহার আলী মাস্টার, অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মিঞা, আব্দুস সামাদ মাস্টার, আব্দুল জলিল, নজরুল ইসলাম জলিল, জামসেদ আলী শেখ, আব্দুর রশিদ, মো. লুৎফর রহমান ভোলা, আবু তালেব মিঞা প্রমুখ। এলাকার জনসাধারণের সর্বাত্মক সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধরা ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজের ৪০ ভাগ অস্ত্র ও গোলাবারুদ নামাতে সক্ষম হন। পাকসেনারা আবার চলে আসতে পারে একথা ভেবে তাঁরা অবশিষ্ট অস্ত্রসহ জাহাজ দুটিতে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে দেন। পুনরায় হানাদার বাহিনীর আক্রমণ আন্দাজ করে কমান্ডার হাবিব উদ্ধারকৃত অস্ত্রশস্ত্র ভূঞাপুর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের হেডকোয়ার্টার্স থেকে অতি দ্রুত সখিপুর বনাঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সরিয়ে ফেলেন। জাহাজের মালামালগুলো পাহাড়ে প্রেরণ করা এবং নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে রাখার দায়িত্বে ছিলেন- আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিম, বুলবুল খান মাহবুব, মোয়াজ্জেম হোসেন খান, আব্দুল হামিদ ভোলা, খোদা বক্স মিঞা, আব্দুল আলীম তালুকদার, সিরাজ উদ্দিন তালুকদার, আব্দুল বারী ও মীর মোয়াজ্জেম হোসেন দুদু মিয়া। এঁদের অভূতপূর্ব তৎপরতায় অস্ত্রশস্ত্র ও গোলা-বারুদ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছিল।
এ ঘটনার পর হানাদার বাহিনী চারদিক থেকে ভূঞাপুর আক্রমণ করে। এ-যুদ্ধে তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহারসহ ওপর থেকে বিমান দিয়ে আক্রমণ করে এবং সিরাজগঞ্জ থেকে দূরপাল্লার কামান চালায়। এর নেতৃত্বে ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সেনাপতি আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী। এ-যুদ্ধে প্রায় পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন এবং পাকহানাদার বাহিনী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। স্বাধীনতাপরবর্তী ভূঞাপুরের সিরাজকান্দিতে জাহাজমারা যুদ্ধের স্বরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। [মামুন তরফদার]
তথ্যসূত্র: কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, স্বাধীনতা ‘৭১, অনন্যা ১৯৯৭; তপন কুমার দে, মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইল, জাগৃতি প্রকাশনী ১৯৯৬; মামুন তরফদার, সিরাজকান্দির জাহাজ ধ্বংসের ইতিহাস, গতিধারা প্রকাশনী ২০১০; মো. হাবিব উল্লাহ্ বাহার, টাঙ্গাইল জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গতিধারা ২০০৯
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড