You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্থানীয় মুক্তিবাহিনী জামাই বাহিনী (মহম্মদপুর, মাগুরা)

জামাই বাহিনী (মহম্মদপুর, মাগুরা) একটি স্থানীয় মুক্তিবাহিনী। এ বাহিনীর প্রধান কাজী নূর মোস্তফা নহাটা অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা জামাই নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৪০ সালে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার কমলাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন্সে রিজার্ভ পুলিশের সাব- ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ৩০শে মার্চ কুষ্টিয়ার যুদ্ধে একজন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে তার নিকট থেকে উদ্ধার করা চাইনিজ এসএমজি ও গুলি নিয়ে পরিবারসহ নহাটার পার্শ্ববর্তী বাগড়দিয়া গ্রামে শ্বশুরালয়ে অবস্থান করেন। এ কারণে তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনী ‘জামাই বাহিনী’ নামে পরিচিত লাভ করে। তখন এ গ্রামের পাশের গ্রাম নহাটায় আনসার ও মুজাহিদ গ্রুপের ৬-৭ জন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন। তিনি তাঁদেরসহ আরো কিছুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দলকে সুসংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। নহাটা কেন্দ্রিক মুক্তিযুদ্ধে প্রাথমিক অবস্থায় তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হন। আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা অনুযায়ী তাঁর বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৯০ জনের মতো। যুদ্ধকালে তিনি ও তাঁর বাহিনীর সাংকেতিক নাম ছিল ‘লাউডোগা’। ভারতে অবস্থিত কোম্পানি ও সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সের সঙ্গে তিনি এ নামে যোগাযোগ করে গোলাবারুদ সংগ্রহ করতেন। দুর্দান্ত সাহসী এ বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করার পাশাপাশি বিচক্ষণতার সঙ্গে দল পরিচালনা করেছেন। মে মাসের শেষদিকে রাজাকার বাহিনী নহাটা আক্রমণ করলে তিনি তাঁর বাহিনী নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন। রাজাকার বাহিনীর ৪ জন সদস্য নিহত হওয়ার পর তারা পিছু হটে।
আগস্ট মাসে পাকিস্তানি বাহিনী নহাটা আক্রমণ করলে নূর মোস্তফা হাইস্কুলের বিজ্ঞান ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বে এসএমজি নিয়ে অসীম সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করেন। তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর নিহত মেজর মোশারফের নেমপ্লেট ও সোল্ডার ব্যাজ খুলে নেন, যা পরে বয়রা কোম্পানির কমান্ডার ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদাকে উপহার দেন। অতঃপর তিনি কিছু সংখ্যক সদস্যসহ ভারতে যান। তাঁর দলের অধিকাংশ সদস্য পুলিশ, ইপিআর ও মুজাহিদ সদস্য ছিলেন। ফলে তাঁদের নিয়মিত বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বয়রাতে কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন হুদা একটি প্লাটুন গঠন করে নূর মোস্তফাকে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেন। অস্ত্র ইস্যু করে তাঁর প্লাটুনকে শালিখা-মহম্মদপুর অঞ্চলে প্রেরণ করেন। লেফটেন্যান্ট কমল সিদ্দিকী তাঁকে মাগুরা জেলার শালিখা অঞ্চলের দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি তাঁর দল নিয়ে দেশে ফিরে এসে গঙ্গারামপুর (শালিখা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত একটি ইউনিয়ন)-এ ক্যাম্প স্থাপন করেন এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি ও তাঁর বাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। নহাটা অঞ্চলের মানুষ জামাই বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান চিরকাল স্মরণে রাখবে। [সৈয়দ হাদিউজ্জামান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!