জামিজুরী গণহত্যা (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)
জামিজুরী গণহত্যা (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ২৮শে এপ্রিল বুধবার। পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ইউনিয়নের জামিজুরী গ্রামে এ গণহত্যা ঘটায়।
দোহাজারীতে ছিল পাকবাহিনীর একটি ক্যাম্প। ঘটনার দিন বিহারিরা এ ক্যাম্প থেকে জামিজুরী গ্রামে পাকসেনা পাঠানোর ব্যবস্থা করে। তিন গ্রুপ পাকসেনা সকাল আটটায় জামিজুরী গ্রামে আসে। তাদের সঙ্গে যে দোসররা ছিল, তারা হলো— আহমদুর রহমান (দোহাজারী), ওয়াহিদ মিয়া খান (দোহাজারী), আবদুল হালিম খান বিহারি, কামরুদ্দিন বিহারি, আমিন শরীফ (পূর্ব দোহাজারী), গণি মুন্সি (জামিজুরী পঞ্চায়েত বাড়ি), আইয়ুব আলী মাস্টার (জামিজুরী ওয়াজির বড়বাড়ি), আনিস বেগ বিহারি ভদু (রায়জোয়ারা), বজল আহমদ (রায়জোয়ারা), আবদুশ শুক্কুর (কিল্লাপাড়া), মীর আবুল বশর মাস্টার (চিড়িংঘাটা), ইয়াকুব আলী (জামিজুরী), আবুল কাসেম (দোহাজারী), ইসমাইল হাজি (জামিজুরী), আজাহার মিয়া (জামিজুরী), তাজর মুলুক (দোহাজারী) প্রমুখ।
হানাদাররা আসার আগে জামিজুরীর অনেক অধিবাসী ঘরবাড়ি ত্যাগ করে জামিজুরী পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বৃদ্ধ, শিশু ও নারীসহ অনেকে থেকে যায়। হানাদাররা সকাল আটটা থেকে দুপুর দুটা পর্যন্ত নৃশংস বর্বরতা ও তাণ্ডব চালিয়ে এ গ্রামের ১৩ জনকে হত্যা করে। এ-সময় তারা কয়েকজন নারীকে ধর্ষণ করে এবং ৪৫০টি ঘরে লুটপাট ও ৪৪৯টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে।
জামিজুরী গণহত্যায় শহীদরা হলেন- হরিরঞ্জন মজুমদার (পিতা সারদা কুমার মজুমদার), রমণী দাশ, অমর দাশ (পিতা যুধিষ্ঠির দাশ), নগেন্দ্ৰ ধুপী, মহেন্দ্রলাল সেন (পিতা কাশীরাম), রেণুবালা ভট্টাচার্য (স্বামী কালিকিংকর ভট্টাচার্য), বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য (পিতা মণীন্দ্রলাল ভট্টাচার্য), মাস্টার মিলন ভট্টাচার্য (পিতা মণীন্দ্রলাল ভট্টাচার্য), মাস্টার প্রফুল্লরঞ্জন ভট্টাচার্য (পিতা প্রতাপচন্দ্র ভট্টাচার্য), বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্য (পিতা জগবন্ধু ভট্টাচার্য), করুণারঞ্জন চৌধুরী, তারাচরণ ভট্টাচার্য (পিতা রামনারায়ণ ভট্টাচার্য) এবং মণীন্দ্র দাশ (মুজাফ্ফরাবাদ, পটিয়া)।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার অল্পকাল পূর্বে বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্য তাঁর ঘরের পেছনে ঘরের কাজে মাটি সংগ্রহের জন্য একটি ছোট গর্ত খনন করিয়েছিলেনে। এ গর্তেই শহীদ ১৩ জনের লাশ সমাধিস্থ করা হয়। পরবর্তীকালে ৭ই ডিসেম্বর চন্দনাইশ উপজেলার জঙ্গল হাশিমপুরস্থ দেওয়ানজির খিলে সংঘটিত যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ মজুমদার (পিতা ক্ষিতীশ মজুমদার, লোহাগাড়া) এবং বিমল কান্তি চৌধুরী (পিতা সুধাংশু বিমল চৌধুরী, সাতকানিয়া)-র লাশের অবশেষও এখানে রাখা হয়। গর্তটি এখন জামিজুরী গণকবর হিসেবে পরিচিত। এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের পর জামিজুরী গ্রামের শহীদ প্রফুল্লরঞ্জন ভট্টাচার্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র নিপু রতন ভট্টাচার্য এ গণহত্যায় সরাসরি জড়িতদের বিরুদ্ধে তৎকালীন পটিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (জিআরনং: ১৯০/৭২, ঘটনার স্থান ও তারিখ: জামিজুরী ২৮.৪.৭১ থানা, মামলা নং ও ধারা: পটিয়া পুলিশ কেস নং ২৭, তারিখ ১৯.২.৭২, US/143/448/380/436/302 BPCR/W 11 BDCO/72) | [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড