You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্থানীয় মুক্তিবাহিনী জাকের আহমদ চৌধুরী গ্রুপ (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)

জাকের আহমদ চৌধুরী গ্রুপ (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) একটি স্থানীয় মুক্তিবাহিনী। এর কমান্ডার ছিলেন জাকের আহমদ চৌধুরী (পুরাণগড়, সাতকানিয়া)।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি অঞ্চল ও বাজালিয়া এলাকার কিছু লোক পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে একটি গ্রুপ গঠন করেন। গ্রুপ কমান্ডার হন পুরাণগড় এলাকার জাকের আহমদ চৌধুরী। ধোপাছড়ি অঞ্চলে ১৯৭০ সালের নির্বাচিত এমপিএ সুলতান আহমদ কুসুমপুরি কর্তৃক স্থাপিত মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পকে তাঁরা নিজেদের ক্যাম্প হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে যুদ্ধের ট্রেনিংও নেন। এমনকি, সকল কর্মকাণ্ডে তাঁরা কুসুমপুরির আদেশ-পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করেন। গ্রুপ গঠনের পর তাঁরা শুয়ালক এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। এছাড়াও বোমাংহাট বৌদ্ধমন্দির ও বাজালিয়া হাইস্কুলে তাঁরা পাকদোসরদের ওপর অপারেশন পরিচালনা করেন। কুসুমপুরির পরামর্শে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারীতে পাকিস্তানি বাহিনীর গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য রেকি করার কাজেও তাঁরা জড়িত হন। এক পর্যায়ে ৩৭ জন যোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য কুসুমপুরির ব্যবস্থাপনায় ভারতের দেমাগ্রীতে গমন করেন। সেখানে তাঁরা শিখ সেনা অফিসার মেজর বোয়াল সিং-এর তত্ত্বাবধানে কয়েকজন হাবিলদার ও নায়েকের কাছে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। হাবিলদারদের একজনের নাম ছিল হিমাদ্রি। ট্রেনিং শেষে তাঁদের নিয়ে ১৪৭ নং জাকের আহমদ চৌধুরী গ্রুপ গঠন করা হয়। গ্রুপ কমান্ডার জাকের আহমদ চৌধুরী (পিতা মৌলবি ফয়েজ আহমদ, পুরাণগড়, সাতকানিয়া)-র নামে বরাদ্দকৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিল একটি ৯ এমএম স্টেনগান, ২টি ৩৬ হ্যান্ড গ্রেনেড, ২টি ডেটোনেটর, ৩০০ রাউন্ড গুলি; ডেপুটি কমান্ডার নুরুল ইসলাম (পিতা আবদুর রহমান মুন্সি, পুরাণগড়, সাতকানিয়া)-এর নামেও সমপরিমাণ অস্ত্র বরাদ্দ ছিল। গ্রুপের সদস্যরা হলেন- আবদুস সোবহান (পুরাণগড়, সাতকানিয়া), আবু তাহের (পিতা দরবেশ আলী, বাজালিয়া, সাতকানিয়া), মিয়া ওবাইদুল কিবরিয়া (পিতা মুজিবুর রহমান, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), ইঞ্জিনিয়ার হারুন আল রশিদ (পুরাণগড়, সাতকানিয়া), শাহাদাৎ হোসেন (পিতা বদিউর রহমান, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), আবুল কাসেম (পিতা ফয়েজ আহমদ, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), আবদুর রশিদ (পিতা আজিজুর রহমান, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), প্ৰবীন্দ্ৰ লাল বড়ুয়া (পিতা হরকিশুর বড়ুয়া, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), মির আহমদ (পিতা খাইজুর শরীফ, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), আবদুল খালেক (পিতা মালেকুর জামান, মনেয়াবাদ সাতকানিয়া), মনোরঞ্জন জলদাস (পিতা সুরেন্দ্র জলদাস, মনেয়াবাদ, সাতকানিয়া), শফি আহমদ (পিতা নজু মিয়া সওদাগর, বাজালিয়া, সাতকানিয়া), নজির আহামদ (পিতা নুরুজ্জামান সওদাগর, বড়দুয়ারা, সাতকানিয়া), নেপাল চন্দ্ৰ (পিতা রাজবিহারী, মাহালিয়া, সাতকানিয়া), খায়ের আহমদ সিকদার (পিতা সোলেমান সিকদার, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), বদিউল আলম (পিতা এজাহার মিয়া, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), জাকারিয়া সিকদার (পিতা কালা মিয়া সওদাগর, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), সোবাহান আলী (পিতা বাছন আলী, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), আফজল মিয়া (পিতা গুনু মিয়া, মনেয়াবাদ, সাতকানিয়া), আবদুর রহমান (পিতা চুঞ্জু মিয়া, মনেয়াবাদ, সাতকানিয়া), আহামদ হোসেন বদ (পিতা কালু মিয়া, বাজালিয়া, সাতকানিয়া), আবদুর রহিম (পিতা বদিউল আলম সিকদার, বাজালিয়া, সাতকানিয়া), সিদ্দিক আহামদ (পিতা আবদুর রশিদ, মনেয়াবাদ, সাতকানিয়া), নাজিম উদ্দিন (পিতা এন্দু মিয়া, মনেয়াবাদ, সাতকানিয়া), জালাল আহমদ (পিতা আবদুল মিয়া, মনেয়াবাদ, সাতকানিয়া), মোস্তাফিজুর রহমান (পিতা ছৈয়দুর রহমান, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), আবু তাহের সিকদার (পিতা নুরু আহামদ সিকদার, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), নজরুল ইসলাম (পিতা নুরু আহামদ সিকদার, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), আবদুল মিয়া (পিতা কালাম মিয়া, মনেয়াবাদ, সাতকানিয়া), কবির আহমদ (পিতা গুনু মিয়া, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), প্রীতি রঞ্জন বড়ুয়া (পিতা ব্রহ্মচারী বড়ুয়া, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), আবুল কাশেম (পিতা সিদ্দিক আহমদ, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), আবুল কালাম (পিতা সিদ্দিক আহমদ, পুরাণগড়, সাতকানিয়া), বদিউর রহমান (পিতা আলতাফ মিয়া, পুরাণগড়, সাতকানিয়া) এবং আবুল খায়ের (পিতা সাহেব মিয়া, পুরাণগড়, সাতকানিয়া)। প্রত্যেক সদস্যের জন্য বরাদ্দ ছিল একটি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, ২টি ৩৬ হ্যান্ড গ্রেনেড, ২টি ডেটোনেটর ও ৩০০ রাউন্ড গুলি
বরকল পাকিস্তানি ক্যাম্পের একদল সেনা ও রাজাকার পাহাড়ি মেয়েদের নির্যাতন করতে নদীপথে রওনা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জ্বালিয়ানপাড়ার কাছাকাছি এলে, তাদের সঙ্গে ১৪৭ নং জাকের আহমদ চৌধুরী গ্রুপের যুদ্ধ হয়। এতে ৫ জন পাকিস্তানি সেনা ও ৩ জন রাজাকার নিহত হয়। হানাদাররা ইঞ্জিনচালিত যে-নৌকায় করে আসছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেনেডের আঘাতে সেটি পানিতে ডুবে যায়। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!