You dont have javascript enabled! Please enable it! জলিরপাড় যুদ্ধ (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

জলিরপাড় যুদ্ধ (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ)

জলিরপাড় যুদ্ধ (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ) সংঘটিত হয় অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে এবং হানাদারদের অনুগত ৩০-৩৫ জন পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে।
জলিরপাড় মুকসুদপুর থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত। এর মধ্যে দিয়ে মধুমতি -আড়িয়াল খাঁ নদীর সংযোগ নদী চলে গেছে। এখানে নদী দিয়ে নৌযান চলাচলের একটি টোল অফিস ছিল। খ্রিস্টান মিশনারিদের দুটি মিশন আছে— ১টি ক্যাথলিক মিশন, অপরটি প্রোটেস্টান মিশন। মুক্তিযুদ্ধকালে ক্যাথলিক মিশনের ফাদার ছিলেন মারিনো রিগান। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। তাঁদের হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতেন। আর্থিক সাহায্যও করেছেন অনেককে। ফাদার মারিনো রিগান একজন ইতালীয় খ্রিস্টান পাদরি হলেও তিনি পাক সরকারের বিপক্ষে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ছিলেন। এ কারণেই তিনি পাক সামরিক সরকারের অনেক গোপন সংবাদ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সরবরাহ করেছেন।
অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে একদিন মুক্তিযোদ্ধারা বামনডাঙ্গা হয়ে নৌকাযোগে জলিরপাড়ের দিকে আসছিলেন। এমন সময় তাঁরা খবর পান যে, পাকসেনাদের বড় একটি কার্গো বিপুল পরিমাণ মালামাল নিয়ে নদীপথে টেকেরহাটের দিকে যাচ্ছে। এ সংবাদ পেয়ে মজিদ তালুকদারের গ্রুপ এবং কহিনুরের গ্রুপ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জলিরপাড় বাজারে অবস্থান নেয় এবং কার্গোটি কাছাকাছি চলে এলে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালান। কার্গোর ভেতরে প্রায় ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র পুলিশ ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলে তারাও আক্রমণ চালায়। কহিনুর এলএমজি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করলে আক্রমণের ভায়াবহতা দেখে তারা বুঝতে পারে যে, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে তারা পেরে উঠবে না। তাই তারা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং কার্গোটি পাড়ে ভেড়ায়। এরপর সবাই হাত উঁচু করে কার্গো থেকে নেমে আসে এবং মুক্তিযোদ্ধারা গিয়ে তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসেন। কার্গোতে বিপুল পরিমাণ চাল ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশে কার্গো থেকে মালামাল নামানো হয় এবং উপস্থিত জনতার মধ্যে তা বিলি করা হয়। জলিরপাড় যুদ্ধে কমান্ডার কহিনুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এখানে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য ও অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং তাঁদের খাদ্যসমস্যা দূর হয়। যে ৩০-৩৫ জন পুলিশ ধরা পড়ে, তাদের প্রথমে ননীক্ষির ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয় এবং সেখান থেকে পরে তাদের উজানীতে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বরের পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। [মো. ফিরোজ খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড