জলেশ্বরী যুদ্ধ (ফুলবাড়ী, দিনাজপুর)
জলেশ্বরী যুদ্ধ (ফুলবাড়ী, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে কমান্ডার বছির উদ্দিন কমান্ডার তোবারক হোসেন ও কমান্ডার আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে। দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার মিরপুর (সীমান্ত সংলগ্ন ভারতীয় অংশে অবস্থিত জলেশ্বরী ক্যাম্পের সামনে, যার তিনদিকেই ভারত) এলাকায় সংঘটিত এ-যুদ্ধে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয়।
ঘটনার দিন জলেশ্বরী ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় খবর আসে যে, পাকসেনাদের একটি দল মিরপুর থেকে রশিদপুরের দিকে যাচ্ছে। এ খবর পাওয়ামাত্র জলেশ্বরী ক্যাম্প ও বিপরীত দিকের আরো দুটি ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা এম্বুশ করে ওঁৎ পেতে থাকেন। বিশজনের মতো পাকসেনা এম্বুশের ভেতর প্রবেশ করামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। পাকসেনারাও পাল্টা গুলি ছোড়ে। তিনদিক থেকে আক্রান্ত হওয়ায় পাকসেনারা ক্রস ফায়ারের মধ্যে পড়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে পাকসেনাদের ওয়ারলেসধারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে গুলি করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এর ফলে পাকসেনাদের সংবাদ আদান-প্রদান অনেকটা ব্যাহত হয়। দুপুর তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উভয় পক্ষে থেমে-থেমে গুলি চলতে থাকে। একসময় পাকসেনাদের পক্ষ থেকে গুলি আসা বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা পরিস্থিতি দেখার জন্য এগিয়ে গিয়ে স্থানীয় জালাল চৌধুরীর বাড়ির সামনে পাকসেনাদের ৯টি লাশ দেখতে পান। এ-সময় পাকসেনারা পুনরায় গুলি ছোড়ে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে বিরতি দিয়ে চলে গেলে পাকসেনারা লাশগুলো নিয়ে তাদের চিন্তামন ডাকবাংলো ক্যাম্পে চলে যায়। এ-যুদ্ধের পর পাকসেনারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং তারা আর মিরপুর ও রশিদপুরের দিকে অগ্রসর হয়নি। পরবর্তীকালে চিন্তামন ডাকবাংলো ক্যাম্পে গেরিলা আক্রমণ হলে তারা ঐ ক্যাম্পটি গুটিয়ে চলে যায়। ফলে ঐ এলাকা হানাদারমুক্ত হয়।
জলেশ্বরী যুদ্ধে তিনটি গ্রুপে ১৫ জন করে মোট ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের একজন বাদে বাকি সকলেই ছিলেন ফুলবাড়ী উপজেলার অধিবাসী। তাঁরা হলেন— প্রথম গ্রুপ: কমান্ডার বছির উদ্দিন (মহদিপুর), সহ- কমান্ডার মো. আবুল কাশেম (কৃষ্ণপুর), নূরুল ইসলাম (নন্দিগ্রাম), এছার উদ্দিন (কড়াই), আইয়ুব আলী (কৃষ্ণপুর), আবুল হোসেন (কৃষ্ণপুর), মজিবর রহমান (কৃষ্ণপুর), আমিনুল ইসলাম (জলেশ্বরী), আব্দুল হালিম (জলেশ্বরী), জামিল উদ্দন (জলেশ্বরী), আজিজুল হক (নবাবগঞ্জ), রুহুল আমিন (নবাবগঞ্জ), সিদ্দিকুর রহমান (নবাবগঞ্জ), আজাহার উদ্দিন (পরে শহীদ); দ্বিতীয় গ্রুপ: কমান্ডার তোবারক হোসেন (নন্দিগ্রাম), নির্মল চন্দ্র (চিন্তামন), খয়ের উদ্দিন, ফয়েজ উদ্দিন (কড়াই), আব্দুল জলিল (জলেশ্বরী), করিম (পানিকাটা, জগন্নাথপুর), ধীরেন্দ্রনাথ (আমবাড়ী, পার্বতীপুর), মনসুর আলী (ঐ), ওবায়দুর (ঐ); তৃতীয় গ্রুপ: কমান্ডার আব্দুল হাই (চিন্তামন), মো. ইলিয়াস (ঐ), ছিদ্দিকুর রহমান (ঐ), নজমুল হক (ঐ), ছমির উদ্দিন (গলাকাটা), তোজাম্মেল হক (দানোয়া), মাহমুদুল (দিনাজপুর সদর) প্রমুখ। [আব্দুল জলিল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড