জাইলার চর যুদ্ধ (কালকিনি, মাদারীপুর)
জাইলার চর যুদ্ধ (কালকিনি, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় ২৯শে আগস্ট। কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ সীমানায় আড়িয়াল খাঁ ও পালাদি নদীর মোহনায় পাকিস্তানি হানাদার সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এ-যুদ্ধ হয়। নদীর মোহনার পাশে ‘জাইলার চর’ নামক স্থানের অবস্থান বলে এ-যুদ্ধ জাইলার চর যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত। যুদ্ধের পরিণতিতে পাকবাহিনীর ৪টি চালবোঝাই কার্গো মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। যুদ্ধে কালকিনি থানা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রহমানের নেতৃত্বে কালীগঞ্জ শ্যাওলাপট্টি ক্যাম্পের ২০-২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। যুদ্ধে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন এম এ রহমানের টু-আই-সি আর্মির ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মালেক সরদার, নুরুল ইসলাম, ফরিদ আহমেদ মন্টু, মিয়া আবদুর রহিম প্রমুখ।
বাণিজ্য কেন্দ্র চরমুগরিয়া বন্দরের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদীর পাড়ে কুমারটেক নামক স্থানে একটি সরকারি খাদ্যগুদাম ছিল। এটি ছিল দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম বৃহৎ খাদ্যগুদাম। বরিশাল, গৌরনদী, টকিসহ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার সকল মহকুমা ও থানা সদরে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে এ খাদ্যগুদাম থেকে রেশন সরবরাহ করা হতো। ২৯শে আগস্ট ৪টি কার্গো চাল বোঝাই করে এ খাদ্যগুদাম ঘাট থেকে নোঙর তোলে। খাদ্যবাহী কার্গোগুলোর নিরাপত্তা দিতে পাকসেনা-ভর্তি একটি লঞ্চ তাদের সঙ্গে ছিল।
খাদ্য বোঝাই কার্গোবহরের খবর পেয়ে এম এ রহমানের নেতৃত্বে দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধারা ৩টি দলে ভাগ হয়ে আড়িয়াল খাঁ ও পালাদি নদীর মোহনায় জাইলার চরের উভয় পাড়ে অবস্থান নেন। ভোররাতে কার্গোগুলো তাঁদের নাগালে আসামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। পাকসেনারা পাল্টা- আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র গুলি বিনিময় হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে চালবোঝাই কার্গোগুলো ফেলে রেখে হানাদার সেনাদের বহনকারী লঞ্চটি মাদারীপুরের দিকে দ্রুত পালিয়ে যায়। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা চাল বোঝাই ৪টি কার্গো দখলে নেন। সে-সময় কালকিনি থানার মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড খাদ্য সংকটে ভুগছিলেন। এ কার্গোগুলো দখলের পর তাদের আর খাদ্য সমস্যায় পড়তে হয়নি। কমান্ডার এম এ রহমানের অনুরোধে এলাকার সাধারণ মানুষ সন্ধ্যার আগে সকল কার্গো থেকে চাল খালাস করে। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধারা গরিব মানুষের মধ্যেও প্রচুর চাল বিলি করেন। জাইলার চর যুদ্ধের পর আড়িয়াল খাঁ-পালাদি নদীপথে পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের খাদ্য ও রসদ পরিবহন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড