বীর প্রতীক জাকির হোসেন
জাকির হোসেন, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৭) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৭ সালের ১৭ই জুলাই বরিশাল জেলার মুলাদি থানার চরপদ্মা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আক্কেল আলী এবং মাতার নাম হাচেন বানু। জাকির হোসেন পূর্ব চরপদ্মা প্রাইমারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি এবং শরিয়তপুরের নাগেরপাড়া হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি গৌরনদী থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
জাকির হোসেন ১৯৬৮ সালে ইপিআর (ইস্ট পকিস্তান রাইফেল)-এ সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকার পিলখানায় তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে তাঁর নিয়োগস্থল যশোর নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। যশোর থেকে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি চুয়াডাঙ্গায় বদলি হন। চুয়াডাঙ্গা থেকে তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। চুয়াডাঙ্গা উইং হেডকোয়ার্টার্স থেকে ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ জাকির হোসেন ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন কে এন হুদার নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে যশোরের যাদবপুর, কাশিমপুর, ছুটিপুর, বেনাপোল, সিমলা, সাহেববাড়ি, চৌগাছা, লেবুছড়ি, মাইশলা, কাকরডাঙ্গা, মাদারবাড়ি, পলিয়ানপুর, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ, কামারখালি, নাভারন, খেজুরতলা এবং কুষ্টিয়ার দর্শনায় সংঘটিত বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বীরত্বের পরিচয় দেন। তাঁর সাহস ও দেশপ্রেমের জন্য তিনি সকলের প্রশংসা লাভ করেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার জাকির হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪৭২, খেতাবের সনদ নম্বর ২২২)।
মুক্তিযুদ্ধের পর জাকির হোসেন বিডিআর-এর যশোর সেক্টরে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে তিনি নায়েক হন। ১৯৭৫ সালে ঢাকায় আসেন এবং মেজর হাবিলদার হিসেবে পদোন্নতি পান। ঢাকা থেকে তিনি ৩০ ব্যাটালিয়নে বদলি হয়ে কক্সবাজার যান। সেখান থেকে ১৯৮৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
অবসরের পর পারিবারিক কৃষি জমি দেখাশোনা করেন। জাকির হোসেন বর্তমানে বরিশালের চরপদ্মায় বসবাস করছেন। তিনি ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহানারা হোসেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড