You dont have javascript enabled! Please enable it!

জয়বাংলা পুকুর বধ্যভূমি (গোপালগঞ্জ সদর)

জয়বাংলা পুকুর বধ্যভূমি (গোপালগঞ্জ সদর) গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এখানে বহু লোককে হত্যা করা হয়। পাকবাহিনী ৩০শে এপ্রিল গোপালগঞ্জ সিও অফিসে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন এলাকায় নির্যাতন ও গণহত্যা চালায়। বর্তমান গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের পাশের পুকুরটিই ‘জয়বাংলা পুকুর’ নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকবাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকারআলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শশাবাড়িয়া, পাইককান্দি, হরিদাসপুর, খাটরা, ঘোষেরচর, গোপীনাথপুর, আড়পাড়া, দেবগ্রাম, বাওড়িয়া প্রভৃতি গ্রাম থেকে মুক্তিকামী জনসাধারণকে ধরে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালাত। তারপর জয়বাংলা পুকুর ঘাটে নিয়ে কাউকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, কাউকে গুলি করে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দিত। তারা গোপালগঞ্জের খাটরা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সুধীর রঞ্জন বিশ্বাসকে ধরে এনে জয়বাংলা পুকুরপাড়ের তালগাছের সঙ্গে বেঁধে পেটে লম্বা পেরেক ঢুকিয়ে হত্যা করে তার লাশ পুকুরে ফেলে দেয়। এছাড়া পাকবাহিনী অনেক নারীকে ক্যাম্পে ধরে এনে তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন শেষে তাদেরকেও হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়। এভাবে জয়বাংলা পুকুর বধ্যভূমিতে শতশত মানুষকে হত্যা করা হয়। এ বধ্যভূমিতে শহীদদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন- মাহবুবুর রহমান ওরফে চাঁদ মিয়া (পিতা গোলজার হোসেন চৌধুরী, সাবরা), গোলজার হোসেন চৌধুরী (সাবরা), সুধীর রঞ্জন বিশ্বাস (অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য, খাটরা), সন্তোষ কুমার দাস (প্রভাষক, কায়েদ-এ আযম কলেজ, বর্তমান গোপালগঞ্জ কলেজ), হারুনর রশীদ মোল্লা (মানিকহার), আসাদ সরদার (শশাবাড়িয়া), মোসলেম শেখ (শশাবাড়িয়া), বালা মোল্লা (শশাবাড়িয়া), আবদুল বারেক (শশাবাড়িয়া), ইউনুস আলী (পাইককান্দি), দাউদ শেখ (পাইককান্দি), আফসার মোল্লা (হরিদাসপুর), সচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস (খাটরা), নারায়ণ মণ্ডল (খাটরা), কুটি মিয়া শেখ (ঘোষেরচর), আসাদ শেখ (ঘোষেরচর), মনি মিয়া (ঘোষেরচর), বেলায়েত শেখ (মানিকদী), শচীনন্দ্ৰ নাথ বৈদ্য (ডোমরাশুর), কিবরিয়া খান (গোপীনাথপুর), ফিরোজ খান (গোপীনাথপুর), আবু তারা মাঝি (গোপীনাথপুর), মাহবুব আলী খান (বেদগ্রাম), আবদুল লতিফ জাকির (বেদগ্রাম), শওকত আলী (কলপুর), আবদুল বারেক (ঘোড়াদাইর), মোস্তাফিজুর রহমান (মেরী গোপীনাথপুর), ডা. মান্নান মোল্লা (শুকতাইল), আবদুল আলী গাজী (আড়পাড়া), আলাউদ্দিন কাজী (আড়পাড়া), আশরাফ মোল্লা (বাওড়িয়া, টুঙ্গিপাড়া), শিহাবুদ্দিন মোল্লা (বাওড়িয়া, টুঙ্গিপাড়া), রঙ্গু মোল্লা (বাওড়িয়া, টুঙ্গিপাড়া), হাশেম মোল্লা (বাওড়িয়া, টুঙ্গিপাড়া), আশরাফ আলী শেখ (বাওড়িয়া, টুঙ্গিপাড়া) ও আব্দুল মান্নান খালাশী (মিত্তিকা বাটিকা)। বর্তমানে পুকুরটি ভরাট করে সেখানে শহীদদের নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!