জয়পুরহাট কলেজ মাঠ সংলগ্ন বধ্যভূমি (জয়পুরহাট সদর)
জয়পুরহাট কলেজ মাঠ সংলগ্ন বধ্যভূমি (জয়পুরহাট সদর) জেলার অন্যতম বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত। এখানে কত মানুষকে হত্যা করা হয়, তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায় না। তবে এখানে ও এর আশেপাশে অসংখ্য গণকবর রয়েছে। অধিকাংশকে হত্যা শেষে মাটিচাপা দেয়া হয়। নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।
জয়পুরহাট সদরের সাগরপাড়া নামক স্থানে জয়পুরহাট কলেজ অবস্থিত। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে। জয়পুরহাট ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বাঙালিদের ধরে এনে এ বধ্যভূমিতে অমানুষিক নির্যাতন শেষে হত্যা করা হতো। জয়পুরহাট সরকারি কলেজ মাঠের পূর্বপাশের একটি কাঁঠাল গাছে (বর্তমানে গাছটি নেই) মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতাকামী অসংখ্য ছাত্র-যুবককে ঝুলিয়ে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়েছে। পাশের বারোঘাটি পুকুর এবং পুকুরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় পানিতে ও পুকুরের পাড়ে শতাধিক মৃতদেহ দেখা গেছে। এ বধ্যভূমিতে হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী এডভোকেট আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক সাখিদার ও মোহাম্মদ হামিদুন (পিতা আবদুস সামাদ)। কলেজের মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে শরীরের মাংস কেটে কুকুর দিয়ে খাওয়ানো হতো। কলেজ ক্যাম্পে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। এখানকার বন্দিদের হত্যা করে আদর্শপাড়া জুম্মা ঘরের সামনে নিচু জমিতে তাদের শতাধিক লাশ ফেলে দেয়া হয়। বগুড়া জজকোর্টের খ্যাতনামা আইনজীবী আব্দুল জোব্বারের বাড়ি জয়পুরহাট উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামে। তিনি আওয়ামী লীগ-এর সমর্থক ছিলেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে এবং লুৎফর রহমানকে মল্লিকপুর গ্রামের বাড়ি থেকে ধরে জিপের পেছনে বেঁধে তাদের কলেজ ক্যাম্পে নিয়ে আসে। নির্মম অত্যাচার চালিয়ে হত্যার পর কলেজ মাঠের পূর্ব পাশের গণকবরে তাদের লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়। [রেহানা পারভীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড