জগন্নাথপুর আট শহীদের কবর (দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা)
জগন্নাথপুর আট শহীদের কবর (দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা) মুজিবনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিমি দূরে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। এখানে ৮ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে।
৩রা আগস্ট গেরিলা গ্রুপ কমান্ডার হাফিজুর রহমান জোয়ার্দারের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা দামুড়হুদা থানাধীন সীমান্ত সংলগ্ন জয়পুর গ্রামের শেল্টার ক্যাম্পে অবস্থান নেন। পার্শ্ববর্তী নাটুদা গ্রামে ছিল পাকিস্তানি ‘বাহিনীর ক্যাম্প। মুক্তিযোদ্ধারা ৪ঠা আগস্ট মুসলি44ম লীগ নেতা এবং পাকবাহিনীর দালাল কুবাদ খাঁ-কে শেল্টার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে আসেন। ৫ই আগস্ট সকালে কুবাদ খাঁ-র দুজন লোক জয়পুর শেল্টার ক্যাম্পে এসে মিথ্যা খবর দেয় যে, রাজাকাররা তাদের গ্রামের পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ খবর শুনে হাসান জামানের নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের শায়েস্তা করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্প থেকে আনুমানিক ২ কিমি দূরে বাগোয়ান গ্রামের মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিমে ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। নাটুদা ক্যাম্পের হানাদাররা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আখক্ষেত ও পাটক্ষেতে এম্বুশ করে। অগ্রসরমাণ মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ হানাদারদের এম্বুশে পড়ে যায়। উভয় পক্ষের মধ্যে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গোলাগুলি চলে।
পাকবাহিনীর ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের আক্রমণে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদৎ বরণ করেন এবং কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়। পরে পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেনের নির্দেশে রাজাকাররা পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর গ্রামে পাশাপাশি ২টি গর্ত খুঁড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দেয়, যা আট কবর নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে এ শহীদদের কবর বাঁধাই করে একটি স্মৃতিসৌধ, একটি মুক্তমঞ্চ এবং একটি মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রহশালা নির্মাণ করা হয়।
আট কবর স্থলে একটি ফলকে শহীদ প্রত্যেকের নাম ও পরিচিতি দেয়া আছে। এ ৮ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হলেন- হাসান জামান (১৯৫২-১৯৭১) (পিতা ইয়াকুব হোসেন, গোকুলখালী বাজার, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা), খালেদ সাইফুদ্দিন তারেক (১৯৫২-১৯৭১) (পিতা মহিউদ্দিন আহমেদ, পোড়াদহ, মিরপুর, কুষ্টিয়া), রওশন আলম (১৯৫০-১৯৭১) (পিতা আজিজুর রহমান, ঝাটিয়াপাড়া, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা), আলাউল ইসলাম খোকন (১৯৫২-১৯৭১) (পিতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ, চুয়াডাঙ্গা), আবুল কাশেম (১৯৫২-১৯৭১) (পিতা বজলুর রহমান, মাঝেরপাড়া, চুয়াডাঙ্গা), রবিউল ইসলাম (১৯৫২-১৯৭১) (পিতা মো. ছিদ্দীক আহমেদ, মোমিনপুর, চুয়াডাঙ্গা), কিয়াম উদ্দিন (পিতা রহিম মণ্ডল, রোয়াকুলি, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা) ও আফাজ উদ্দিন (পিতা রমজান আলী শেখ, চন্দ্ৰবাস, কোমরপুর, চুয়াডাঙ্গা)। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড