বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশিষ্ট ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ, লেবার পার্টির প্রভাবশালী সদস্য ও এমপি জন স্টোনহাউজ
জন স্টোনহাউজ (১৯২৫-১৯৮৮) বিশিষ্ট ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ, লেবার পার্টির প্রভাবশালী সদস্য ও এমপি, সাবেক পোস্টমাস্টার জেনারেল, হ্যারল্ড উইলসনের লেবার সরকারের সাবেক পোস্ট এন্ড টেলিকমিউনিকেশন্স মন্ত্রী (১৯৬৯-১৯৭০), বাংলাদেশের একনিষ্ঠ সমর্থক, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাংলাদেশপন্থী অত্যন্ত সক্রিয় এমপি গ্রুপের প্রধান নেতা, বাঙালি শরণার্থীদের ওপর অক্সফাম প্রকাশিত The Testimony of Sixty (21 October 1971) নামে প্রকাশিত ডকুমেন্টে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অন্যতম।
জন স্টোনহাউজ ১৯২৫ সালের ২৮শে জুলাই ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম জন থমসন স্টোনহাউজ। তিনি সাউদাম্পটন থেকে কলেজ শিক্ষা সমাপ্ত করে লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স এন্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স-এ ভর্তি হন এবং সেখান থেকে অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি রয়েল এয়ারফোর্সে যোগ দিয়ে ২ বছর কর্মরত ছিলেন। ১৬ বছর বয়সে জন স্টোনহাউজ ব্রিটিশ লেবার পার্টিতে যোগ দেন। তিনি কো- অপারেটিভ সোসাইটির কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা War on Want-এর হয়ে বিভিন্ন সময়ে কাজ করেন। ১৯৫৭ সালে প্রথম লেবার পার্টি থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জন স্টোনহাউজের বিভিন্নমুখী তৎপরতার মধ্যে ছিল ভারতে বাঙালি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন, বাংলাদেশের পক্ষে লন্ডনে আয়োজিত বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও র্যালিতে যোগদান ও বক্তব্য প্রদান, ব্রিটিশ পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশ সংকট নিয়ে নিবন্ধ প্ৰকাশ, গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দান, পার্লামেন্টে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ বা কখনো নিজেই প্রস্তাব উত্থাপন, মুক্তিযুদ্ধের সহায়তায় বিশেষ ফান্ড গঠনে উদ্যোগ গ্রহণ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ডাক টিকেট অবমুক্তকরণে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন ইত্যাদি।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট নামে বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু হওয়ার পরপর প্রাণভয়ে দলেদলে মানুষ ভারতীয় সীমান্তবর্তী রাজ্যসমূহে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করতে থাকে। ১৯শে এপ্রিল লেবার পার্টির এমপি ব্রুস ডগলাস-ম্যান-সহ জন স্টোনহাউজ সরেজমিনে বাঙালি শরণার্থীদের অবস্থান দেখতে লন্ডন থেকে ভারতে ছুটে যান। তাঁরা একাধিক শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে লন্ডনে ফিরে গিয়ে গণমাধ্যমে বিশেষ করে স্টোনহাউজ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাকাণ্ড বন্ধে সক্রিয় হতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধকালে জন স্টোনহাউজ একাধিকবার ভারতের বাঙালি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন।
৩০০ পার্লামেন্ট সদস্যের স্বাক্ষরে শ্রমিক দলের এমপি ব্রুস ডগলাস-ম্যান অনতিবিলম্বে পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধ ও সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের আহবান জানিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যে প্রস্তাব উত্থাপন করেন, ১৪ই মে ঐ প্রস্তাবের ওপর বিশদ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে জন স্টোনহাউজ এক দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। ভারতে বাঙালি শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে হিন্দু- মুসলিম নির্বিশেষে হাজার-হাজার মানুষের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ, তাদের অনেকের আত্মীয়-স্বজনকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে হত্যা, পূর্ব বাংলার সার্বিক অবস্থাকে অত্যন্ত ভয়াবহ হিসেবে চিহ্নিতকরণ, শরণার্থী শিবিরে মানুষের দুর্বিষহ জীবন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অধিকৃত পূর্ব বাংলায় সমূহ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা ইত্যাদি উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, সার্বিক পরিস্থিতি আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তির জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ। এমতাবস্থায় বিশ্ব সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘ নীরব ভূমিকা পালন করতে পারে না। তিনি এও উল্লেখ করেন যে, সমস্যার মূলে হলো পাকিস্তানি সামরিক গোষ্ঠী কর্তৃক একটি নির্বাচনের রায় (১৯৭০) সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সামরিক শক্তি প্রয়োগ। তিনি সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মুক্তির সংগ্রামকে জাতিসংঘ সনদের ‘জাতি- জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের ঘোষণার সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৬-দফার পক্ষে গণম্যান্ডেট দেয়। বাঙালিরা স্বাধীনতা চায় কি-না, এ বিষয়ে প্রয়োজনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গণভোটের আয়োজন করতে পারে। তবে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পক্ষে হাজার মাইল দূর থেকে বাংলাদেশের ওপর তাদের শাসন-নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা আর সম্ভব হবে না। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অনিবার্য এবং তা হবে সেদেশের জনগণ ও বিশ্ব শান্তির জন্য কল্যাণকর। অতএব বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে শান্তি, গণতন্ত্র ও জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারে বিশ্বাসী সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান করা কর্তব্য।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে গড়ে ওঠা একশন কমিটিসমূহের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে (২৪শে এপ্রিল) বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে উপদেষ্টা করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হওয়ার পর মুক্তি সংগ্রামে সাহায্য বিশেষ করে অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মুজিবনগর সরকার-এর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ-এর নিকট থেকে একটি ফান্ড গঠনের তাগিদ আসে। সে অনুযায়ী মে মাসে স্টিয়ারিং কমিটির ১১ নম্বর গোরিং স্ট্রিটের বাংলাদেশ হাউজ অফিসে এক বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ নামক একটি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর তিনজন ট্রাস্টির মধ্যে জন স্টোনহাউজ ছিলেন অন্যতম (অপর দুজন ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও চেজওয়ার্থ)। বলা যায়, ব্রুস ডগলাস-ম্যানের প্রস্তাবের ধারাবাহিকতায় জুন মাসে ২১০ জন এমপি-র সমর্থন নিয়ে জন স্টোনহাউজ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে = পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ উত্থাপন করে সে বিষয়ে আলোচনার দাবি জানান। ১৫ই জুন ঐ প্রস্তাবের ওপর বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এবং এডওয়ার্ড হীথের সরকারকে বিষয়টি জাতিসংঘের দৃষ্টিতে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
জন স্টোনহাউজ যখনই কলকাতায় বাঙালি শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে এসেছেন, তখনই এর পাশাপাশি তিনি মুজিবনগর সরকারের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁর কাছ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ২৪শে জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে হারকোট কক্ষে বাংলাদেশ সরকার-এর পক্ষে বাংলাদেশের মানচিত্র, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, ব্যালটবক্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছাত্র-শিক্ষকদের হত্যা করে রক্ত ঝড়ানো, শিকল ভাঙ্গার ছবি এরূপ ৮টি ডাকটিকিট প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। জন স্টোনহাউজ তাঁর নিজের নামে ঐ কক্ষটি বরাদ্ধ নিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এবং ২পিটার শোর সহ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বেশ কয়েকজন এমপি ও বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি গ্রাফিক শিল্পী বিমান মল্লিক এগুলোর নকশা তৈরি করেন। জন স্টোনহাউজ পূর্বে প্রথমে পোস্টমাস্টার জেনারেল এবং পরবর্তীতে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকায় একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্ট্যাম্পগুলো তৈরি করা তাঁর পক্ষে সহজ হয়। তিনি স্ট্যাম্পগুলো মুজিবনগর সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে বিতরণের ব্যবস্থা করেন। উদ্দেশ্য ছিল, স্ট্যাম্প বিক্রি করে বাংলাদেশ সরকারের জন্য অর্থ সংস্থাপনের পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশের রূপ দেয়া।
এসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে আয়োজিত সভা-সমাবেশ ও র্যালিতে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন। যেমন মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মিসেস অরুণা আসফ আলী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে অন্যান্য দেশ সফর শেষে লন্ডন এলে কনওয়ে হলে লর্ড ফেনার ব্রুকওয়ের সভাপতিত্বে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ঐ সভায় জন স্টোনহাউজ বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। জুন মাসের প্রথমদিকে ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ একই উদ্দেশ্যে লন্ডনে এলে একশন বাংলাদেশের উদ্যোগে যে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, সেখানেও অন্যান্যের মধ্যে জন স্টোনহাউজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন করে বক্তৃতা করেন। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি অবস্থায় সে দেশের সামরিক জান্তা কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর গোপন বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তি ও স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতির দাবিতে পল কনেট-এর নেতৃত্বাধীন একশন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ট্রাফালগার স্কোয়ারে যে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, তাতেও অন্যান্য ব্রিটিশ এমপিদের সঙ্গে জন স্টোনহাউজ বক্তব্য রাখেন। ১১ই আগস্ট পাকিস্তানে সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর গোপন বিচার শুরু হলে ঐদিন হাইড পার্কে প্রবাসী বাঙালিদের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এরপর প্রহসনমূলক বিচার বন্ধ ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে ব্যানার, প্লাকার্ডসহ বেশকিছু ব্রিটিশ নাগরিক ও বিপুল সংখ্যক বাঙালি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ছাড়াও জন স্টোনহাউজসহ বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ এমপি ঐ শোভাযাত্রার অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দেন। জুলাই মাসে পাকিস্তান সরকার ব্রিটিশ সরকারের কাছে ত্রাণ তৎপরতার নামে ইঞ্জিন চালিত কিছু নৌযান সরবরাহের আবেদন জানায়। তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল, নদীমাতৃক পূর্ব বাংলায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনায় সেগুলো ব্যবহার করা। একদল ব্রিটিশ এমপি-র জোর বিরোধিতার কারণে ব্রিটিশ সরকারের পাকিস্তানের প্রতি প্রতিশ্রুত ঐ নৌযান সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। বিরোধিতাকারী এমপিদের মধ্যে জন স্টোনহাউজ ছিলেন অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৭ জন বাঙালি নাবিক একটি জাহাজে করে কার্ডিফে আসেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ইংল্যান্ডে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর অনুরোধে জন স্টোনহাউজ, পিটার শোর ও ব্রুস ডগলাস-ম্যান এমপি কার্ডিফের পার্লামেন্ট সদস্য এ্যালফ্রেড এভেন্স-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সর্বপ্রকার আইনি সহায়তাদানের ব্যবস্থা করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জন স্টোনহাউজ এক সমস্যা-সংকুল জীবনে পতিত হন, যা কার্যত তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটায়। ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি বিচ থেকে তিনি নিখোঁজ হন। এরপর অস্ট্রেলিয়া থেকে তাঁকে উদ্ধার ও গ্রেপ্তার করে ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে আনা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে সাত বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন এবং পরপর তিনবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৮ সালের ১৪ই এপ্রিল মাত্র ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। মৃত্যুর পূর্বে তিনি Death of an Idealist (London, W H Allen, 1975) শিরোনামে একটি বই লিখেন। এভাবে একজন প্রভাবশালী ও প্রতিশ্রুতিশীল ব্রিটিশ রাজনীতিবিদের জীবনাবসান ঘটে তবে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অমূল্য অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। [হারুন-অর-রশিদ]
তথ্যসূত্র: আবদুল মতিন, স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবাসী বাঙালী, লন্ডন, র্যাডিকেল এশিয়া পাবলিকেশন্স ১৯৮৯; আবু সাঈদ চৌধুরী, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি, ঢাকা, ইউপিএল ১৯৯০; শেখ আবদুল মান্নান, মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্যের বাঙালীর অবদান, ঢাকা, জ্যোৎস্না পাবলিশার্স, ১৯৯৮; Harun-or-Rashid, “British perspectives, pressures and publicity regarding Bangladesh, 1971″, Contemporary South Asia 1995, Oxford, 4 (2), 139-149; https://en.wikipedia.org/wiki/ John_Stonehouse; Hansard, 14 May 1971.
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড