You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.24 | ছৈলাবুনিয়া-বাঁশতলা-থালিয়া গণহত্যা (স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

ছৈলাবুনিয়া-বাঁশতলা-থালিয়া গণহত্যা (স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর)

ছৈলাবুনিয়া-বাঁশতলা-থালিয়া গণহত্যা (স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর) সংঘটিত হয় ২৪শে মে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত এ গণহত্যায় ২৬ জন মানুষ শহীদ হন।
স্বরূপকাঠি উপজেলায় হানাদার বাহিনীর আগমনে গণকপাড়া ইউনিয়নের ৩টি গ্রাম ছৈলাবুনিয়া, বাঁশতলা ও থালিয়ার সাধারণ মানুষজন আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঁশতলার জঙ্গল বৈরাগী ভিটায় নিরাপদ আশ্রয়ে থাকত। স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে হানাদার বাহিনী এ খবর জানতে পারে। ২৪শে মে তারা স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় ছৈলাবুনিয়া, বাঁশতলা ও থালিয়া গ্রাম আক্রমণ করে। গ্রামে প্রবেশ করেই তারা গণহত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও নারীনির্যাতনে মেতে ওঠে। রাজাকার- বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানি সৈন্যরা সহজেই বৈরাগী ভিটাসহ যেসব স্থানে মানুষ পালাতে পারে, সেসব স্থানে গিয়ে আতঙ্কিত লোকজন ধরে এনে বেয়নেট চার্জ এবং গুলি করে হত্যা করে। থালিয়ার ১৮ বছর বয়সী ১০ম শ্রেণির ছাত্রী কনক প্রভা। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সে প্রতিদিন পালাতে জঙ্গলে যেত। ২৪শে মে জঙ্গলে (বৈরাগীর ভিটা) যাওয়ার সময় ওড়নায় জড়িয়ে কিছু চাল সঙ্গে নিয়ে নেয়। রাজাকারদের দেখানো পথে পাকিস্তানি সৈন্যরা এখানে পৌঁছে। রাজাকাররা কনক প্রভাকে জঙ্গল থেকে ধরে হানাদারদের গানবোটের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। জমির মধ্য দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নেয়ার সময় বৃদ্ধা মানোদা সুন্দরীর সামনে পড়লে কনক প্রভা দুহাত দিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে। বৃদ্ধা মানোদা সুন্দরীও হানাদারদের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে কনক প্রভাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। বারবার প্রচেষ্টার পরও মানোদা সুন্দরী কনক প্রভাকে ছাড়তে না চাইলে হানাদাররা উভয়কে গুলি করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কনক প্রভা ও মানোদা সুন্দরীর নিষ্প্রাণ দেহ।
ছৈলাবুনিয়া-বাঁশতলা-থালিয়া গণহত্যায় ২৬ জন নিরপরাধ মানুষ শহীদ হন। তারা হলেন- পশ্চিম গয়েশকাঠি গ্রামের নিরোদ বিহারী সমদ্দার (পিতা কালীচরণ সমদ্দার), করফা গ্রামের নির্মল মণ্ডল (পিতা ক্ষিরোদ মণ্ডল), থলিয়া গ্রামের কনক প্রভা হালদার (পিতা কুঞ্জ হালদার), অশ্বিনী হালদার (পিতা কুতুরাম হালদার), বিশ্বেশ্বর হালদার (পিতা যজ্ঞেশ্বর হালদার), অশ্বিনী বড়াল (পিতা চন্দ্রকান্ত বড়াল), কার্তিক বেপারী (পিতা কালীচরণ বেপারী), মানোদা সুন্দরী (স্বামী সারদ), ভগবান হালদার (পিতা বুদ্ধিমন্ত হালদার), নিত্যানন্দ হালদার (পিতা অম্বিকা হালদার), শ্রীনাথ হালদার (পিতা মাধব হালদার), বাঁশতলা গ্রামের ললিত মাঝি (পিতা চন্দ্রকুমার মাঝি), সুরেন বেপারী (পিতা বসন্ত বেপারী), ধীরেন হালদার (পিতা ষষ্ঠী হালদার), ষষ্ঠী হালদার (পিতা গোপালচন্দ্র হালদার), শরৎ মণ্ডল (পিতা ঈশ্বর মণ্ডল), ললিত মণ্ডল (পিতা অখিল মণ্ডল), ঈশান মণ্ডল (পিতা বৈকুণ্ঠ মণ্ডল), ছৈলাবুনিয়া গ্রামের ক্ষিরোদ বেপারী, ধীরেন বেপারী (পিতা সতীশ বেপারী), মণীন্দ্রনাথ বেপারী (পিতা ললিত বেপারী), শাখাচরণ এদবর (পিতা কালীচরণ এদবর), মহেন্দ্রনাথ বেপারী (পিতা অককুর বেপারী), লক্ষ্মীকান্ত বেপারী (পিতা পুণ্যচন্দ্র বেপারী), সুদেব ঋষি (পিতা সুরেন্দ্রনাথ ঋষি) ও রাধালক্ষ্মী হাওলাদার (স্বামী মাখন লাল হাওলাদার)। [হাবিবুল্লাহ রাসেল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড