You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.27 | ছোটলেখা চা-বাগান যুদ্ধ (বড়লেখা, মৌলভীবাজার) - সংগ্রামের নোটবুক

ছোটলেখা চা-বাগান যুদ্ধ (বড়লেখা, মৌলভীবাজার)

ছোটলেখা চা-বাগান যুদ্ধ (বড়লেখা, মৌলভীবাজার) সংঘটিত হয় দুবার – জুনের শেষভাগে ও ২৭শে জুলাই। প্রথমবারের যুদ্ধে পাকসেনাসহ ৫ জন রাজাকার- নিহত হয় এবং দ্বিতীয়বারের যুদ্ধে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়ে পরে মারা যান।
ছোটলেখা চা-বাগানে পাকসেনাদের একটি ক্যাম্প ছিল। এ বাগানের পাশে খাগালা বধ্যভূমিতে নিরীহ বাঙালিদের পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যা করত। ছোটলেখা চা-বাগানস্থ পাকিস্তানি ক্যাম্প অপারেশনে কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সোলেমান আলী মিয়া। দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ শুরুর এক পর্যায়ে ৪ নম্বর সেক্টর কামান্ডার মেজর সি আর দত্ত, বীর উত্তম- পেঁচার পাহাড় ক্যাম্পে আসেন। এ ক্যাম্প ছোটলেখা চা-বাগানের কাছাকাছি ভারতের বিএসএফ ঘাঁটির নিকটবর্তী ছিল। সি আর দত্ত শাহবাজপুর-জুড়ী-কুলাউড়ার মধ্যে সংযোগকারী সেতু ও কালভার্ট ধ্বংসের নির্দেশ দেন। উদ্দেশ্য ছিল হানাদারদের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী কমান্ডার সোলেমান আলী ২৮ জনের একটি দল গঠন করেন। তাঁর সহ-কমান্ডার ছিলেন ফখরুদ্দিন ও এনামুল হক। যোদ্ধাদের সঙ্গে লাইট মেশিনগান, স্টেনগান, রাইফেল, গ্রেনেডসহ প্রচুর গোলা-বারুদ ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা পথপ্রদর্শকের পেছনে- পেছনে রাত ৩টায় ছোটলেখা চা- বাগানে পৌঁছেন। মূল পরিকল্পনায় সেখানে যাওয়ার কথা ছিল না। ফলে পথপ্রদর্শক সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দেয়। ততক্ষণে পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা শুয়ে ক্রলিং করে নিরাপদ স্থানে চলে যান। গোটা দল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। হানাদার বাহিনী পাল্টা জবাব না পেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে। রাত ৪টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্পের কাছে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ৪টায় তাঁরা আকস্মিক আক্রমণ শুরু করেন। এ আক্রমণে পাকসেনাদের দোসর রাজাকারসহ ৫ জন নিহত হয়। পাকসেনারা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অনেক অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। এ অভিযান পরিচালনায় সোলেমান আলী অসীম ধৈর্য ও সাহসের পরিচয় দেন।
২৭শে জুলাই ছোটলেখায় আরেকটি অপারেশন পরিচালিত হয়। এ অভিযানে দলনেতা ছিলেন আজিজুল কামাল। এতে অংশ নেন মোছাব্বির বেগ, মনিরউদ্দিন, আব্দুল বারী, সুরুজ মিয়া, নীহারেন্দু ধর, বীরেন্দ্র কুমার দে, আবুল হোসেন, আহমেদ হুমায়ূন, ফয়সল আহমেদ, হুসেন আলী, আমানউদ্দিন, শফিকুর রহমান, নাসিরউদ্দিন, আব্দুল মুকিত প্রমুখ। তাঁরা ২৬শে জুলাই ক্যাম্প থেকে যাত্রা করে ২৭শে জুলাই ভোর পাঁচটায় পাকিস্তানি হানাদারদের ঘাঁটির কাছে অবস্থান নেন। পরিকল্পনামাফিক হঠাৎ আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানিদের ক্যাম্প তছনছ করে দেন। এ-সময় শত্রুপক্ষের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন গুরুতর আহত হন এবং চারদিন পর তিনি শহীদ হন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা ছোটলেখা চা-বাগানে আরো একটি গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করেন। এতে বাগানের প্রবেশমুখের কালভার্টটি গুঁড়িয়ে যায়। [মোস্তফা সেলিম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড