You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.16 | ছোট সুন্দর গণহত্যা (চাঁদপুর সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

ছোট সুন্দর গণহত্যা (চাঁদপুর সদর)

ছোট সুন্দর গণহত্যা (চাঁদপুর সদর) সংঘটিত হয় ১৬ই আগস্ট। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ নৃশংস গণহত্যায় অর্ধশতাধিক মানুষ শহীদ হন।
চাঁদপুর শহরের প্রায় ১০ মাইল পূর্বদিকে ডাকাতিয়া নদীর তীরের গ্রাম ছোট সুন্দর। গ্রামের নামেই ছোট সুন্দর বাজার। -রাজাকার কমান্ডার টেরাগরের বাচ্চুর নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৬ই আগস্ট হাটবারের দিন ছোট সুন্দর বাজার ও পার্শ্ববর্তী তালুকদার বাড়িতে হামলা চালিয়ে বহু নিরপরাধ নর-নারীকে হত্যা করে। তারা তালুকদার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক তালুকদার কালু এবং তাঁর চাচাত ভাই প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়াসহ অনেককে হত্যা করে। এরপর তারা বাজারের মধ্যে প্রবেশ করে ভীত-সন্ত্রস্ত ২৬ জন পলায়নপর মানুষকে ধরে এনে দোচালা মসজিদের নিকট জড়ো করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা নিরস্ত্র এ সকল মানুষদের বিভিন্নভাবে জেরা শেষে সাড়িবদ্ধভাবে দাঁড় করায়। এরপর পেছন থেকে ব্রাশ ফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দেয়। হানাদার বাহিনীর ছোট সুন্দর গণহত্যায় অর্ধশতাধিক মানুষ শহীদ হন, যাদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- আবুল খায়ের (মধু রোড, হাজিগঞ্জ; ব্যবসায়ী), শামসুল হক তালুকদার কালু (ছোট সুন্দর; বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক), প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া (ছোট সুন্দর), রুহুল আমিন বেপারী (ছোট সুন্দর), ওয়াদুদ বেপারী (ছোট সুন্দর), হানিফ বেপারী (ছোট সুন্দর, চাঁদপুর), নুরুল ইসলাম মিজি (মিজি বাড়ি, ছোট সুন্দর; কাঠ মিস্ত্রি), আবদুল খালেক (পাটোয়ারী বাড়ি, রামপুর; শিক্ষক), আবদুল ওহাব (বিড়ি বাড়ি, রামপুর; ব্যবসায়ী), সেকান্দার সরদার (সরদার বাড়ি, রামপুর; শ্রমিক), আসলাম (চান্দের বাড়ি, রামপুর), বেনুলাল শীল (শীল বাড়ি, ছোট সুন্দর; ব্যবসায়ী), রাজ মোহন (পাইন্যা বাড়ি, ছোট সুন্দর; ব্যবসায়ী), নুর মোহাম্মদ মিজি (মিজি বাড়ি, ছোট সুন্দর), আবদুল হামিদ (ছোট সুন্দর, বাবুর্চি) ও মহাদেব দাস (ছোট সুন্দর)। ১৯৭২ সালে গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে ছোট সুন্দর বাজারের চালাঘর মসজিদের পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে শহীদ শামসুল হক তালুকদার কালু স্মরণে তাঁর নামে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নামকরণ করা হয়েছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড