বাংলাদেশের প্রথম অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন
ছাত্র ইউনিয়ন ১৯৫২ সালের ২৬শে এপ্রিল ছাত্র ইউনিয়ন- এর প্রতিষ্ঠা হয়। এর দুমাস আগে অনুষ্ঠিত হয় ভাষা- আন্দোলন। ভাষা-আন্দোলনের পটভূমিতে জন্ম নেয়া এ সংগঠনটির প্রধান আদর্শ ছিল ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ তথা ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ। ছাত্র ইউনিয়নই ছিল বাংলাদেশের প্রথম অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন। বাঙালিরা বাংলা ভাষায় কথা বলে এবং এ ভাষাভাষীরাই যেহেতু তদানীন্তন পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ (৫৬ ভাগ), সেহেতু পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত বাংলা – এ মূল দাবির ওপর ভিত্তি করে সংগঠনটির জন্ম। ছাত্র ইউনিয়ন বা বাঙালিদের মধ্যে অন্যরা বাংলাকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলেনি এ যুক্তিতে যে, পাকিস্তানে অন্য ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীও ছিল। তাই পাকিস্তানে একক রাষ্ট্রভাষার দাবি স্বৈরতান্ত্রিক।
তবে শুধু ভাষার অধিকার নয়, ছাত্রদের মাতৃভাষায় উচ্চ শিক্ষার্জন, বাঙালিদের পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনসহ অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান ন্যায্য অংশগ্রহণের উন্মুক্ত সুযোগ, স্বকীয় বিকাশের সুযোগ ইত্যাদি জাতীয়তাবাদী ও অন্যান্য প্রগতিশীল নাগরিক এজেন্ডাও জন্মলগ্ন থেকেই সংগঠনটির ঘোষণা ও কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেজন্যই ছাত্র ইউনিয়ন তদানীন্তন পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও পশ্চিম পাকিস্তানপন্থী পূর্ব বাংলার দালাল রাজনৈতিক নেতাদের সর্বপ্রকার বাঙালির জাতীয় স্বার্থবিরোধী একপেশে অবস্থানের বিরুদ্ধে ক্রমাগত রুখে দাঁড়িয়েছিল। এটিও লক্ষ্য করা যায় যে, ছাত্র ইউনিয়ন ও অপর একটি সহযোগী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ – বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনালগ্নে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্রলীগের মিলিত উগদ্যোগ ও চাপের কারণেই ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে গঠিত হয় হক-ভাসানী-সোহ্রাওয়ার্দীর ঐক্যবদ্ধ যুক্তফ্রন্ট। এ যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে ধরাশায়ী করে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে, যদিও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ঐ বিজয়কে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অত্যন্ত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নস্যাৎ করে দেয়। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের বুকে নেমে আসে মার্শাল-ল এবং প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে আবির্ভূত হয় এশিয়ার ‘লৌহমানব’ হিসেবে কথিত জেনারেল আইয়ুব খান। সে-সময় থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের শিক্ষা ও স্বাধিকারের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগ্রাম। পুরো ষাট দশকে এর পর থেকেই শিক্ষার অধিকার, স্বায়ত্তশাসনের অধিকার এবং গণতন্ত্রের অধিকারকে কেন্দ্র করে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে একের পর এক গড়ে ওঠে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-গণ আন্দোলন। ষাটের দশক ছিল ছাত্র ইউনিয়ন সহ ছাত্র আন্দোলনের সবচেয়ে উজ্জ্বল সময়।
জন্মলগ্ন থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের মূল স্লোগান ছিল ঐক্য, শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি। ঐক্য বলতে তারা বোঝাতেন সকল ছাত্রের ঐক্য। অর্থাৎ ছাত্রদের যে-সমস্ত দৈনন্দিন সাধারণ সমস্যা রয়েছে, যেমন শিক্ষা ব্যয়ের সমস্যা, ডিগ্রির সময়সীমা ও কারিকুলাম সমস্যা, ভাষা সমস্যা, হল-হোস্টেলের আবাসিক সমস্যা ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যা, যেমন শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশের সমস্যা, সর্বজনীন শিক্ষার অধিকার, বৈজ্ঞানিক ও বৈষম্যহীন গণমুখী শিক্ষানীতি কায়েম ইত্যাদি বিষয় নিয়েও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় পর্যায়ে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়ন। সেসব আন্দোলনে রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধে উঠে সকল ছাত্রকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেয় ছাত্র ইউনিয়ন। এভাবেই সংগঠনটি ক্রমশ জনপ্রিয় ও একটি জাতীয় ছাত্র সংগঠনে রূপান্তরিত হয়। ছাত্র ইউনিয়নের ইংরেজি সংক্ষিপ্ত নামকরণ হয় ‘ইপসু’ (EPSU) বা ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন।
পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শুরু থেকেই শিক্ষা-সংক্রান্ত আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সাধারণ ছাত্রদের ব্যাপক ঐক্যের জন্য সচেষ্ট হয়। তখন ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্রলীগের মধ্যে এসব প্রশ্নে নানা সংলাপ ও ঐকমত্য গড়ে উঠেছিল, তবে কোনো-কোনো প্রশ্নে মতভিন্নতাও ছিল।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথমে মুসলিম লীগই ছিল সরকারি দল এবং বিরোধী দলে ছিল কমিউনিস্ট পার্টি (১৯৪৮) ও আওয়ামী মুসলিম লীগ (১৯৪৯)। কমিউনিস্ট পার্টি সর্বভারতীয় পার্টি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পাকিস্তান সৃষ্টির পর পাকিস্তানকে মেনে নিয়ে বিরোধী দল হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে পাকিস্তান রাষ্ট্র কর্তৃক কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে মুসলিম লীগ থেকে বেড়িয়ে আসা সোহ্রাওয়ার্দী- আবুল হাশিম সমর্থকদের নিয়ে গঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগ (১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগ) এবং আরো পরে – আওয়ামী লীগ থেকে বেড়িয়ে আসা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর মধ্য থেকে আন্ডার গ্রাউন্ডে তারা কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবিভক্ত ভারতে কমিউনিস্ট আদর্শের অনুসারী ছাত্র- যুবকদের সংগঠনটির নাম ছিল ছাত্র ফেডারেশন। ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্টরা গড়ে তোলেন যুবলীগ (১৯৫১) নামে একটি প্রগতিশীল সংগঠন। এটিই পরবর্তীতে ছাত্র ইউনিয়ন সংগঠনের জন্ম দেয়। সুতরাং কমিউনিস্ট পূর্বসুরীদের প্রভাবে ছাত্র ইউনিয়নে প্রথম থেকেই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী-ধনতন্ত্রবিরোধী মতাদর্শ প্রবল ছিল। বিশেষ করে তখন পর্যন্ত সোহ্রাওয়ার্দী সমর্থক ছাত্রলীগের ধারণা ছিল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন হচ্ছে দুর্বল একটি শক্তি। পক্ষান্তরে, ধনতান্ত্রিক দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল প্রবল পরাক্রমশালী। যেহেতু “জিরো’ প্লাস ‘জিরো’ যোগফল ‘জিরো’, সেহেতু পাকিস্তানের উচিত সোভিয়েত ‘জিরো’র সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রত্যাখান করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করা। এ ছিল সোহরাওয়ার্দীর বৈদেশিক নীতি। এজন্য সোহ্রাওয়ার্দীর অনুসারী ছাত্রলীগ- আওয়ামী লীগ প্রথম দিকে পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তিসমূহ (Seato and Cento) সমর্থন করত। তবে ছাত্রলীগ- আওয়ামী লীগের মধ্যেও ব্যতিক্রম ছিল। যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান – মনে-মনে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছিলেন। অন্যদিকে, ছাত্র ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী’ দেশ হিসেবে অভিহিত করে প্রবলভাবে সোহরাওয়ার্দীর ‘জিরো থিওরি’-র বিরোধিতা করতে থাকে। তাদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শক্তিধর ঠিকই, কিন্তু সে যার বন্ধু হবে তাকে সে ক্রমশ জিরোতে পরিণত করবে। উল্টো দিক থেকে, সোভিয়েত ইউনিয়নকে তারা মনে করতেন নিপীড়িতদের প্রকৃত বন্ধু। ছাত্র ইউনিয়ন তাই পকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নীতিই শুধু নয়, বৈদেশিক নীতিরও প্রবল সমালোচক ছিল। যদিও সাম্রাজ্যবাদের প্রশ্নে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে ছাত্রলীগের এ মতপার্থক্য শুরুতে প্রবল ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে ৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-র ৬- দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান- এবং সর্বশেষে ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দুই সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবেই সকল গণসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের মধ্যকার মতপার্থক্যগুলো পরবর্তীতে অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছিল। একদিকে বাস্তব অভিজ্ঞতা অভিজ্ঞতা ছাত্রলীগকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতি বিক্ষুব্ধ এবং সমাজতন্ত্রের প্রতি ক্রমশ আকৃষ্ট করেছিল। অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়নও ক্রমাগত বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি অধিকতর মনোযোগী হয়ে ওঠে। তবে উভয় সংগঠনের এ সম্পর্কের মধ্যে সবসময়ই টানা-পোড়েনও অব্যাহত ছিল। ছাত্রলীগের অনুসারী নেতৃবৃন্দ অনেকেই মনে করতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ৬-দফাই হচ্ছে বাঙালির ‘মুক্তি সনদ’। ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা বলতেন, ‘ছয় দফা’ বা স্বায়ত্তশাসনের দাবি বাঙালির ‘মুক্তি সনদ’ নয়। তাই এর সঙ্গে অর্থনৈতিক মুক্তির দাবিও যুক্ত করতে হবে। আর সে ধারাতেই শ্রমিক-কৃষকের দাবিগুলো ৬ দফার সঙ্গে যুক্ত করে রচিত হয় ১১ দফা কর্মসূচি (১৯৬৯), গঠিত হয় ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়ন সহ অন্যদের নিয়ে সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। পরবর্তীতে এদের নেতৃত্বেই সৃষ্টি হয় ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে। ৬৯-এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলনকালে ২০শে জানুয়ারি শহীদ হন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ, যাকে নিয়ে রচিত হয়েছে কবি শামসুর রাহমানের অমর সৃষ্টি ‘আসাদের শার্ট’।
এক সঙ্গে পথ চলাকালেও এর মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলতে থাকেন, ছাত্র ইউনিয়ন অতিমাত্রায় আন্তর্জাতিকতাবাদী। অভিযোগ ওঠে, ‘মস্কোতে বৃষ্টি পড়লে ছাত্র ইউনিয়ন বাংলাদেশে ছাতা ধরে’ অর্থাৎ তাদের ভাষায় ছাত্র ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় বেশি। এসব বাদানুবাদ চলতে থাকায় ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যেও এক সময় ছাত্রলীগবিরোধী বিদ্বেষ তৈরি হয়। ছাত্র ইউনিয়নের সংকীর্ণচেতা উগ্র বাম অংশটি তখন বিভক্ত হয়ে বের হয়ে গিয়ে (১৯৬৬ সালে) পাল্টা আওয়াজ তোলে ‘৬ দফা হচ্ছে সিআইএ-র দলিল’। এ অভিযোগ আদৌ সত্য ছিল না। তারপরও বিভক্ত এ অংশটি পরবর্তীতে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে গড়ে তোলে ছাত্র ইউনিয়ন-মেনন গ্রুপ। মূল ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে থেকে যান বেগম মতিয়া চৌধুরী (বর্তমান আওয়ামী লীগ নেত্রী) এবং এ অংশের নাম হয় ছাত্র ইউনিয়ন-মতিয়া গ্রুপ।
৬৯-এর পর থেকে ঘটনাবলি দ্রুত অগ্রসর হতে থাকে। ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বুঝতে সক্ষম হন যে, সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম ছাড়া বাংলার মানুষের জাতীয় মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়। তাদের লড়তে হবে এক দফা অর্থাৎ স্বাধীনতার লক্ষ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের ছাত্রীরা ডামি রাইফেল নিয়ে প্রকাশ্যে মার্চপাস্ট শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু সকলকে ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা’র আহ্বান জানান। সবাই যখন ক্রমান্বয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫শে মার্চ কালরাত্রে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এদিকে বঙ্গবন্ধু তাদের হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় বাঙালির ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।
এ মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়ন গৌরবের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ সরকার-এর নেতৃত্বে তারা গড়ে তোলেন ‘ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন’ সম্মিলিত গেরিলা বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিজয়ীর বেশে এ বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ঘরে ফিরে আসে। তখন ছাত্র ইউনিয়নের নতুন নামকরণ হয় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১২টি সম্মেলনে যাঁরা নির্বাচিত হয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, তাঁরা হলেন— যুগ্ম-আহ্বায়ক কাজী আনোয়ারুল আজিম ও সৈয়দ আবদুস সাত্তার (১৯৫২); সভাপতি মোহাম্মদ সুলতান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস (১৯৫২- ৫৪); সভাপতি আব্দুল মতিন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম আরিফ টিপু (১৯৫৪-১৯৫৬); সভাপতি কাজী আনোয়ারুল আজীম, সাধারণ সম্পাদক এস এ বারী এ টি (১৯৫৬- ১৯৫৭); সভাপতি আব্দুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক শাহ আজিজ আক্কাস (১৯৫৭-১৯৫৮); সভাপতি ডা. খ ম আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক কে এ এম সা’দ উদ্দীন (১৯৫৮-১৯৬২); সভাপতি ডা. আহমেদ জামান, কার্যকরী সভাপতি জয়নাল আবেদীন খান, সাধারণ সম্পাদক কাজী জাফর আহমেদ (১৯৬২-১৯৬৩); সভাপতি এ কে বদরুল হক বাচ্চু, কার্যকরী সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক হায়দার আকবর খান রনো, কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান (১৯৬৩-১৯৬৫); সভাপতি মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক (১৯৬৫-১৯৬৬); সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা (১৯৬৬-১৯৬৯); সভাপতি মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ (১৯৬৯-১৯৭০); সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (১৯৭০-১৯৭২)।
ছাত্র ইউনিয়ন স্বাধীন বাংলাদেশে পটুয়া কাইয়ুম চৌধুরী অংকিত একটি পোস্টার প্রকাশ করে। তাতে লেখা ছিল-
লাখো শহীদের আত্মদানে
মুক্ত স্বদেশ
এসো দেশ গড়ি।
[এম এম আকাশ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড