You dont have javascript enabled! Please enable it!

ছাব্বিশে আগস্টের গণহত্যা (মিটামইন, কিশোরগঞ্জ)

ছাব্বিশে আগস্টের গণহত্যা (মিটামইন, কিশোরগঞ্জ) সংঘটিত হয় কিশোরগঞ্জ জেলার মিটামইন উপজেলায়। মিটামইন জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। ১৯৭১ সালে এখানে কোনো প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল না। তখন এ থানার তিনটি ইউনিয়ন ইটনা এবং অন্য তিনটি ইউনিয়ন নিকলী থানা থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো। রাজাকার- কমান্ডার ইদ্রিস মৌলানা (ইদু মোল্লা), কেওয়াজোর ইউনিয়নের আবু তাহের, কান্দির আব্দুল মন্নান ভূইয়া, কাটখাল ইউনিয়নের খুর্শিদ ইটনা ও মিটামইন উভয় এলাকায় পাকসেনাদের সহযোগিতা করত এবং সকল অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল।
২৬শে আগস্ট সকালে একদল পাকিস্তানি সেনা রাজাকার ইদ্রিস ও অন্য দালালদের সহযোগিতায় নিকলী উপজেলা ক্যাম্প থেকে এসে মিটামইনে হামলা চালায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা গানবোট ও লঞ্চযোগে মিটামইন বাজারে আসে এবং মিটামইন ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম অবরোধ করে। মিটামইন বাজার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে কালিপুর, খুলিয়াপাড়া, গিরিশপুর, বড়হাটি, বড়কান্দা, সরকার হাটি, ইসলামপুর ও শান্তিপুর কাটখাল প্রভৃতি গ্রামে হামলা চালিয়ে ৪০ জন নারী-পুরুষকে হত্যা করে। লোকজনকে হত্যা করার পর তাদের বাড়িতে আগুন দেয়। এ হামলার সময় আবদুল হামিদ এমএনএ-এর বাড়িতে তারা অগ্নিসংযোগ করে। কয়েক ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে তারা এলাকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এদিন পাকহানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহতরা হলেন- বিষ্ণু চরণ দাস (পিতা রামধন দাস, গিরিশপুর), বিহারী মোহন দাস (গিরিশপুর), মো, ভাইবুদ্দিন (পিতা মো. খলিল মিয়া, ইসলামপুর), কৃষ্ণ কুমার দাস (পিতা শ্যামসুন্দর দাস, সরকার হাটি), চন্দ্রমোহন দাস (পিতা হরিদাস, সরকার হাটি), দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস (পিতা রামচন্দ্র দাস, সরকার হাটি), রূপচান দাস (সরকার হাটি), বনবাসী দাস (সরকার হাটি), শ্যামসুন্দর দাস (পিতা নয়ন দাস, সরকার হাটি), শ্যামসুন্দরের স্ত্রী, দেবেন্দ্র দাসের স্ত্রী (সরকার হাটি) মোহনবাঁশির মা (স্বামী কুলচন্দ্র দাস, সরকার হাটি), আদ্যিনাথের মা (স্বামী গোবরধন দাস, সরকার হাটি), বিপিন বিহারী চৌধুরী (পিতা মোহনবাঁশি চৌধুরী, খুলিয়াপাড়া), রূপবান দাস (খুলিয়াপাড়া), দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস (পিতা ভোলাই দাস, খুলিয়াপাড়া), কার্তিক চন্দ্র শীল (পিতা কামিনী শীল, খুলিয়াপাড়া), অভয় চন্দ্র দাস (গ্রাম খুলিয়াপাড়া), ভোলাই চরণ দাস (পিতা গৌরীকিশোর দাস, খুলিয়াপাড়া), অক্রোরমণি দাস (খুলিয়াপাড়া), মঙ্গল চন্দ্র দাস (বড়হাটি), কুলবাশি দাস (বড়হাটি), কুলবালা দাস্যা (বড়হাটি), জয়বিশ্ব হরিদাস্যা (বড়হাটি), ভীম চন্দ্র বৈষ্ণব (পিতা সুখদেব বৈষ্ণব, কালীপুর), সদয় বৈষ্ণব (পিতা শত্রুঘ্ন বৈষ্ণব, কালীপুর), বেভুল বৈষ্ণব (কালীপুর), উমাচরণ বৈষ্ণব (পিতা চন্দ্ৰমোহন বৈষ্ণব, কালীপুর), রাধাগোবিন্দ বৈষ্ণব (কালীপুর), রামাদিল বৈষ্ণব (পিতা জীবন বৈষ্ণব, কালীপুর), হরচন্দ্র বৈষ্ণব (কালীপুর), উদ্ধব বৈষ্ণব (কালীপুর), জয়গোপাল বৈষ্ণবের স্ত্রী (কালীপুর), সখীচরণ অধিকারী (পিতা হরিকিশোর অধিকারী, কালীপুর), মো. সিরাজুল হক (পিতা মো. বারু মিয়া, শান্তিপুর কাটখাল), মো. মফিজ উদ্দিন (পিতা হাজী ছালামত মুন্সী, বড়কান্দা), মামুদ আলী (পিতা রজব আলী, ইসলামপুর) প্রমুখ। [শেখ অলিনেওয়াজ অলিউল্লাহ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!